নভেম্বর ২৬, ২০২৪

কোরবানির ঈদের আগে ১৫ লাখ টাকায় ছেলের ছাগল কিনতে চাওয়ার ঘটনায় আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের মালিকানাধীন কোম্পানি এস কে ট্রিমসের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি গতকাল রোববার স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের এ তথ্য জানিয়েছে।

কোম্পানিটি জানিয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সুপারিশের ভিত্তিতে মহানগর দায়রা জজ আদালত ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশে কোম্পানির সব ব্যাংক হিসাব জব্দ রয়েছে।

কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছে মতিউর রহমানের ভাই এম এ কাইয়ূম হাওলাদার ও মো. নুরুল হুদা, মতিউর রহমানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানি গ্লোবাল শুজ ও গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিং। এর মধ্যে এম এ কাইয়ূম হাওলাদার কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। কোম্পানিটির শেয়ারের বড় অংশই রয়েছে মতিউর রহমানের পরিবারের সদস্যদের হাতে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির আগে কোম্পানিটি প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমেও শেয়ার ইস্যু করে। ওই সময় কোম্পানিটির শেয়ার কিনেছেন মতিউর রহমানের বোন হাওয়া নুর বেগম, প্রথম ঘরের ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও মেয়ে ফারজানা রহমান ঈপ্সিতা, দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন আক্তার শিবলী, ভায়রা নাসার উদ্দিন, নিকটাত্মীয় রাশিদুজ্জামান, আতিকুর রহমানসহ আরও অনেকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মূলত নামে-বেনামে এস কে ট্রিমসের সিংহভাগ মালিকানায় রয়েছেন মতিউর রহমানের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও নিকটাত্মীয়রা। এস কে ট্রিমস ছাড়াও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১৫-২০টি কোম্পানির প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মতিউর রহমান ও তাঁর সুবিধাভোগীরা।

গত পবিত্র ঈদুল আজহার সময় মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে মুশফিকুর রহমান ১৫ লাখ টাকার ছাগল কিনতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় আসেন। ছেলের বিলাসী জীবনযাপনের সূত্র ধরেই মতিউরের সম্পদের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপরই বেরিয়ে আসে নামে-বেনামে মতিউর রহমান, তাঁর পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের বিপুল সম্পদের হিসাব। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মতিউর রহমানের বিপুল সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। তারই অংশ হিসেবে আদালতের মাধ্যমে মতিউর রহমানের বেশ কিছু সম্পদ এরই মধ্যে জব্দ করা হয়েছে।

এদিকে ব্যাংক হিসাব জব্দের খবরে গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এস কে ট্রিমসের শেয়ারের সর্বোচ্চ দরপতন হয়। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৭০ পয়সা বা পৌনে ৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ টাকা ৮০ পয়সায়। কোনো কোম্পানির ব্যাংক হিসাব জব্দ থাকলে সেই কোম্পানির ব্যবসা-বাণিজ্যও বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে কোম্পানিটির আয় কমতে পারে—এ আশঙ্কায় ব্যাংক হিসাব জব্দের খবরে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এটির শেয়ার বিক্রি করে দেন।

এস কে ট্রিমস ২০১৮ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে এটি ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত একটি কোম্পানি। সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুন সমাপ্ত অর্থবছরে এটি বিনিয়োগকারীদের ৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...