নভেম্বর ২৪, ২০২৪

এসএমই খাতের উন্নয়নে আন্তর্জাতিকমানের একটি এসএমই নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয় বাড়ানোর পাশাপাশি সার্বিক ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত সংস্কার একান্ত অপরিহার্য। পাশাপাশি ঋণ দেওয়া প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি দুর্নীতি কমাতে অটোমেশন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ জরুরি বলেও জানানো হয়েছে।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে ‘এসএমই নীতিমালা ২০১৯-এর সংস্কার : প্রেক্ষিত টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানান বক্তারা।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ। তিনি বলেন, আমাদের এসএমই উদ্যোক্তারা কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছেন ঠিকই, তবে উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজনে এখাতের ভূমিকা এখনও আশানুরূপ নয়, এক্ষেত্রে অর্থায়ন প্রাপ্তির জটিলতা, দক্ষতার অভাব, রাজস্ব নীতিমালা এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে পিছিয়ে থাকার বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের মাধ্যমে দেশের তরুণ শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে বিশেষ করে সেবাখাতের বিকাশ একান্ত অপরিহার্য।

ডিসিসিআই সভাপতি আরো বলেন, সিএমএসএমই খাতের সার্বিক উন্নয়নে কুটির, ক্ষুদ্র, মাঝারি উদ্যোক্তাদের সংজ্ঞায় পরিবর্তন একান্ত অপরিহার্য, সেই সঙ্গে সরকারের অন্যান্য নীতিমালাগুলোতেও সেই সংজ্ঞার অনুসরণ করা আবশ্যক। এছাড়াও তিনি ব্যবসায়িক কাজে সম্পৃক্ত সব ধরনের লাইসেন্স দেওয়া ও নবায়ন প্রক্রিয়াকে ডিজিটাল কার্যক্রমের আওতায় আনা, রাজস্ব কাঠামোর সংস্কার, শুল্ক ব্যবস্থাপনা সহজ করা, লজিস্টিক অবকাঠামোর উন্নয়ন, অর্থায়ন প্রক্রিয়া সহজ করা, এসএমইদের বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়াতে দক্ষতা বাড়ানো ও পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোরারোপ করেন।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সলিম উল্লাহ জানান, আন্তর্জাতিকমানের একটি এসএমই নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এবং তিনি আশা প্রকাশ করেন, এখাতের সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে একটি কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এসএমইদের উন্নয়নে নীতিমালা থাকলেও, সেটি বাস্তবায়নে ইপিবির মতো অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরগুলোর অংশগ্রহণ একান্ত অপরিহার্য, কারণ মন্ত্রণালয় নীতি প্রণয়ন করলেও মূলত অধিদপ্তরগুলো পাঠ পর্যায়ে সেগুলোর বাস্তবায়ন করে থাকে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে ইপিবি কাজ করছে এবং এক্ষেত্রে এসএমইদের আরো বেশি হারে সম্পৃক্ত করতে হবে।

বিসিকের পরিচালক কাজী মাহবুবুর রশিদ বলেন, দেশে উদ্যোক্তা উন্নয়নে সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয় একান্ত অপরিহার্য। এসএমইদের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি বিসিককে আরো শক্তিশালী করার ওপর জোরারোপ করেন তিনি।

মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসেন জানান, মাইক্রোক্রেডিট ফাইন্যান্সিং ইনিস্টিটিউটের মাধ্যমে দেশের মোট এসএমইর ৭০ শতাংশই ঋণ পেয়ে থাকে, যার ৯০ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা। ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি দুর্নীতি হ্রাসে তিনি অটোমেশন কার্যক্রম বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট) নওশাদ মোস্তফা বলেন, এসএমই নীতিমালা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যপরিধি সুনির্দিষ্ট করা আবশ্যক। সেই সঙ্গে কুটির ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিকাশের লক্ষ্যে একটি ‘কমন প্ল্যাটফর্ম সেন্টার’ স্থাপনেরও তিনি প্রস্তাব করেন। পাশাপাশি দেশে পরিচালিত ‘টেকন্যিাল’ এবং ‘ভোকেশনাল’ শিক্ষা কার্যক্রমের আধুনিকায়ন করা একান্ত আবশ্যক বলে মত প্রকাশ করেন।

বিআইবিএমর সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মোশাররফ হোসেন এখাতের উদ্যোক্তাদের সার্বিক উন্নয়নে ‘এসএমই ইনোভেশন ল্যাব’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন, যার মাধ্যমে নতুন পণ্য উদ্ভাবন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও উদ্ভাবিত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ সহজতর হবে। এছাড়াও তিনি সরকারি ব্যবস্থাপনায় ‘সিড ফান্ড’, ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ এবং ‘ভেঞ্চার ক্যাপিটাল’ কার্যক্রম প্রবর্তনের প্রস্তাব করেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...