অক্টোবর ৬, ২০২৪

২০২২ সালের ডিসেম্বরে ইসলামী ব্যাংকের তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার (৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানতে চাওয়া হয়।

ওই বছর ব্যাংকটির চট্টগ্রামের তিনটি শাখার মাধ্যমে বিতরণ করা প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেনামি ঋণের খোঁজ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেঞ্চুরি ফুড প্রডাক্ট, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স এবং মুরাদ এন্টারপ্রাইজকে এ ঋণ দেয়া হয়। তবে ঋণের নথিপত্রে যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নামসর্বস্ব এসব কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে নতুন ঋণ সৃষ্টি করে আগের দায় সমন্বয় করা হয়েছে। ঋণ অনুমোদন ও বিতরণের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া এসব ঋণ ফেরত অথবা খেলাপি করতে বলা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, সরেজমিনে এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পরিদর্শনের সময় পর্যন্ত তিন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আগের দায় সমন্বয় করা হয়। বাকি টাকা কোথায় ব্যয় করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আগের ঋণ সমন্বয় করতে পে-অর্ডার ইস্যুর মাধ্যমে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা হয়।

সেখান থেকে চেকের মাধ্যমে আরও কয়েকটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ঘুরিয়ে এই তিন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করা হয়। এভাবে আগের দায় সমন্বয় করা হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নতুন ঋণের মাধ্যমে পুরোনো ঋণের অর্থ পরিশোধ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা এবং ইসলামী শরিয়াহ পরিপন্থী। এছাড়া বিনিয়োগের বিপরীতে মালপত্র না থাকায় এসব বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ।

বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, বিনিয়োগের অর্থের যথাযথ ব্যবহার না হওয়ার দায়-দায়িত্ব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঋণ অনুমোদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং শাখা ব্যবস্থাপনার ওপর বর্তায়।

সে সময় ইসলামী ব্যাংকের এমডির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখা থেকে সেঞ্চুরি ফুড প্রডাক্ট, জুবিলী রোড শাখা থেকে  ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স ও চাক্তাই শাখা থেকে মুরাদ এন্টারপ্রাইজ নামে প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নির্বাহী কমিটির ১৯৫৯তম সভায় বিনিয়োগ অনুমোদন করা হয়েছে। এসব বিনিয়োগের মেয়াদ ইতোমধ্যে অতিক্রম করায় বকেয়া স্থিতি অবিলম্বে ১৫ দিনের মধ্যে আদায় করতে হবে। আর আদায় করতে না পারলে ক্ষতিজনক, মানে খেলাপি করে জানাতে হবে। সেই সঙ্গে এ বিনিয়োগ সুবিধা দেয়ার সুপারিশ, অনুমোদন ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ার সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে জানাতেও ওই চিঠিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *