নভেম্বর ১৪, ২০২৪

বেসরকারি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে (ইউসিবি) পরিবারতন্ত্র, দুর্নীতি, অর্থপাচার বন্ধসহ বেশ কিছু দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডার, আমানতকারী ও কর্মকর্তারা। একইসাথে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের অবিলম্বে পদত্যাগের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ইউসিবির প্রধান কার্যালয়ের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় ২০০ জন শেয়ারহোল্ডার, আমানতকারী ও ব্যাংক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিক্ষোভকারীরা জানান, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার সহযোগীদের ব্যাপক আত্মসাৎ ও অপকর্মে ইউসিবির আর্থিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। তিনি সময় বাড়ার সাথে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নিজের আত্মীয় স্বজনকে যুক্ত করেছেন। এদের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে নানান কৌশলে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। ইউসিবি থেকে এসব পরিবারতন্ত্র ও দুর্নীতি শিগগিরই দূর করতে হবে।

পাশাপাশি বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের দ্রুত তাদের পদ থেকে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এর আগে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রায় ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের ৩৫০টিরও বেশি সম্পত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যে রিয়েল এস্টেট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন সাবেক আওয়ামী সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। যার ৯০ ভাগই ছিল সদ্য তৈরি নতুন বাড়ি। শুধু যুক্তরাজ্য নয়, দুবাই, তুর্কি, সিঙ্গাপুরেও কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি গড়েছেন এই সাবেক এই মন্ত্রী। নিজের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি দেখিয়ে তিনি এসব সম্পদ গড়তে ব্যাংক থেকে অন্তত ১২ হাজার কোটি টাকা অর্থপাচার করেছেন।

বিক্ষোভে আসা এক শেয়ারহোল্ডার বলেন, ইউসিবির প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালনা পর্ষদ বেশ সৎ এবং স্বচ্ছ ছিলেন। ফলে বছর শেষে ইউসিবি থেকে ৩০-৪০ শতাংশ লভ্যাংশ পাওয়া যেত। কিন্তু সাইফুজ্জামান প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালনা পর্ষদ সরিয়ে নিজের স্ত্রী রুখমিলা জামানকে চেয়ারম্যান এবং রনি জামানকে নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান করেন। এমনকি তিনি সরকারের একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকে বোর্ড সভায় সভাপতিত্ব করতেন। পর্যায়ক্রমে তাদের আত্মীয়দের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বেনামে ঋণ, অর্থপাচার বাড়তে থাকে। এতে লভ্যাংশের পরিমাণ ৫-১০ শতাংশের মধ্যে নেমে আসে।

বর্তমান ব্যবস্থাপনা পর্ষদ নিয়ে ব্যাংকটির কর্মকর্তারাও অভিযোগ তুলেছেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সাল থেকে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কোন পদোন্নতি এবং বোনাস দেওয়া হয় না। ব্যাংকের বার্ষিক মুনাফার খবর জানানো হয় না। উল্টো পরিচালনা পর্ষদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে সায় দিয়ে চলা কর্মকর্তাদের চিটাগং শাখা থেকে এনে ব্যাংক পরিচালনা করা হয়। আর ঢাকার কর্মকর্তাদের গুলশানের কার্যালয়ে পাঠিয়ে একপ্রকার ‘ওএসডি’ করে রাখা হয়।

এদিকে আগের মালিকানা ফিরে পাওয়ার জন্য আজ বেসরকারি খাতের আইএফআইসি, এসআইবিএল, ওয়ান, বাংলাদেশ কমার্সসহ কয়েকটি ব্যাংকে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। বেসরকরি খাতের ইসলামী ব্যাংকে গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকে বুধবার বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তারা বিক্ষোভ করেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...