

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আজ বুধবার ইশতেহার ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ। সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহার উপস্থাপন ও ঘোষণা করবেন।
ইশতেহার প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পর এবার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের ‘নির্বাচনী ইশতেহার-২০২৪’ প্রস্তুত করা হয়েছে। এবারের ইশতেহারের মূল থিম– স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। এতে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট সরকার প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলো থাকছে। থাকছে টেকসই উন্নয়ন ও স্মার্ট জনগোষ্ঠী গড়ে তোলায় নানা পরিকল্পনার বিষয়।
ইশতেহারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতি প্রতিরোধে বিশেষ পদক্ষেপ, দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক খাতের স্বচ্ছতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে স্বনির্ভর ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী করা এবং তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিকেও প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। শিল্পকারখানা স্থাপন করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিয়ে শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করা এবং মানুষের আয় বৃদ্ধি করার অঙ্গীকার রয়েছে এতে। এ ছাড়া সহজলভ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিষয়গুলোকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহার প্রণয়নের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছিল গত ২৭ সেপ্টেম্বর। ওইদিন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাককে আহ্বায়ক এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদকে সদস্য সচিব করে ২৫ সদস্যের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটি গঠন করা হয়। এই উপকমিটি কয়েক দফা বৈঠকের পাশাপাশি ইশতেহার প্রণয়নে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মতামত নিয়েছে। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষক, শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দাবি ও প্রত্যাশার কথাও জেনেছে আওয়ামী লীগ।
পরে উপকমিটির মাধ্যমে তৈরি ইশতেহারের খসড়া তুলে দেওয়া হয় দলীয়প্রধান শেখ হাসিনার হাতে। খুঁটিনাটি সংশোধন এবং সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে সেটি চূড়ান্ত করেন শেখ হাসিনা।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিটি নির্বাচনী ইশতেহারে জাতিকে দেওয়া অঙ্গীকার শতভাগ সুচারুরূপে বাস্তবায়ন ও প্রতিপালন করেছে। সরকারের নির্দিষ্ট মেয়াদের বাইরে দীর্ঘমেয়াদি নানা উন্নয়নের পথনকশাও তৈরি করেছে। এর ধারাবাহিকতায় এবারের ইশতেহারও হবে স্মার্ট ও গণমুখী। ইশতেহারের মূল লক্ষ্যই হবে– স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এর মাধ্যমে মানুষের কাছে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি দৃশ্যমান উন্নয়নকাজ এগিয়ে নেওয়া হবে। আগামী দিনে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার উদ্যোগও নেওয়া হবে।
ইশতেহার প্রণয়ন উপকমিটির সদস্য সচিব ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, ইশতেহারে তরুণ ভোটারদের কীভাবে কাছে টানা যায়– সেটি প্রাধান্য পেয়েছে। এ ছাড়া গুরুত্ব পেয়েছে কৃষি, সেবা, অর্থনৈতিক ও শিল্প উৎপাদন খাত। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মৌলিক অধিকারও নিশ্চিত করা হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য বাস্তবায়নের বিষয়গুলো ইশতেহারে স্থান পেয়েছে।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের ইশতেহারের মূল স্লোগান ছিল– ‘দিনবদলের সনদ’। এতে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারের স্লোগান ছিল– ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি অগ্রাধিকার হিসেবে ১০টি মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের কথা বলা হয় এতে। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারের স্লোগান ছিল– ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। এতে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও ২১০০ সালের মধ্যে ‘নিরাপদ ব-দ্বীপ’ গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা বলা হয়। বলা হয়ে থাকে, এই তিনটি নির্বাচনী ইশতেহার দেশের জনগণ ব্যাপকভাবে গ্রহণ করায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসার লক্ষ্য নিয়ে দলের এবারের ইশতেহার প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে অনেক চমক থাকছে বলে জানিয়েছেন ইশতেহার প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট নেতারা।