নভেম্বর ১১, ২০২৪

আর মাত্র একদিন। ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকেই শুরু হবে ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নানা আয়োজন। ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করিয়ে দেয় ১৯৫২ এর ভাষা শহীদদের, যাদের রক্তস্রোতে আমরা পেয়েছিলাম বাংলা ভাষা। তাদের স্মরণেই নির্মিত হয়েছে শহীদ মিনার। প্রতিবারের মতই এবারও মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে মিনার প্রাঙ্গণে।

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শহীদ মিনার এলাকায় দেখা যায়, সৌন্দর্য বাড়াতে শহীদ মিনারের মূল বেদিসহ আশপাশের রাস্তার দেয়ালে নতুন রঙ করা হচ্ছে। ঝাড়ু ও ধোয়ামোছাসহ পরিষ্কার করার কাজ চলছে পুরোদমে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘিরে আলপনা, সাজসজ্জা ও গাছের গুঁড়ি রং করার কাজ চলছে।

শহীদ মিনারের আশপাশের সব দেয়ালেই ছবি-বাণীতে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে ভাষা আর দেশের কথা। কেউ ভাষা শহীদের ছবি আঁকছেন আবার কেউ বাংলা বর্ণমালা লিখছেন। এক কথায় বলা যায় আলপনা ও বর্ণমালায় সেজে উঠছে শহীদ মিনার এলাকা। প্রতি বছরের মতো এবারও চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা দেয়ালে আলপনা ও ভাষা আন্দোলনের নানা গান, কবিতা ও স্লোগান লেখার কাজ করছেন।

অন্য দিকে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সিসি ক্যামেরা যুক্তসহ প্রয়োজনীয় কাজগুলো চালিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী, র‍্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। গত দুইদিন থেকে দায়িত্ব নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

আলপনার কাজে নিয়োজিত ঢাবির চারুকলার শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত দুই বছর আলপনা আঁকার কাজ করছি। বেশ উপভোগ করি। আমাদের এই সংস্কৃতি চালু থাকুক। দায়িত্ববোধ, দেশ ও বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসার অংশ হিসেবে প্রতিবছরের মতো এবারও কাজ করছি।

একুশে ফেব্রুয়ারি ঘিরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আজ (রোববার) সংবাদ সম্মেলন করেছে ডিএমপি। এ সময় ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা থেকে ২১ ফেব্রুয়ারির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ১২টার পর পরই রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী প্রথমে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দুই ভাগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। প্রথম ভাগে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও বিদেশি কূটনৈতিকরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বিদায় নেওয়ার পর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

এদিকে একুশে উদযাপন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। আশা করছি, যথাসময়ে আমরা কার্যক্রম শেষ করতে পারব।

উপাচার্য বলেন, ভাবগাম্ভীর্য ও মর্যাদার সাথে দিবসটি পালনে সবার সহযোগিতা কামনা করছি। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ঢাবির সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি কর্তৃক গৃহীত সকল কর্মসূচির বাস্তবায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকল সদস্য কাজ করবে। ডিএমপি, র‍্যাব ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, ডিএসসিসি এবং গণমাধ্যমসহ সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও একুশে উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, একুশ উদযাপন আমাদের রাষ্ট্রীয় আচার ও ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব। ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। শহীদ মিনারের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে যাবতীয় কাজও চলছে। আগামীকালের (সোমবার) মধ্যে শতভাগ প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে আশা করছি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রক্টরিয়াল টিম টহল দেবে। তাছাড়া ঢাবির বিএনসিসি ও স্কাউটের স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবেন। পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় থাকবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...