পুঁজিবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট থেকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরের অপেক্ষায় থাকা আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৪৮.১৭৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা কিনে নিয়েছেন বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এবং আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসহ তার সহযোগীরা। কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কোম্পানিটি বর্তমানে পুঁজিবাজারের মূল মার্কেট বা এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত না হওয়ায় বিএসইসির ২০১৯ সালের ২০ জুন, ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ও ২০২২ সালের ৭ জুলাই জারি করা নির্দেশনাগুলো পরিপালন করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
কোম্পানিটি ২৫ কোটি টাকা মূলধন বাড়ানোর বিষয়ে বিএসইসির কাছে আবেদন জানায়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি কোম্পানিটিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি নয়। তাই প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য কোম্পানিটির কমিশনের পূর্বসম্মতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে কোম্পানিকে এ বিষয়ে বিএসইসির জারি করা ২০১৯ সালের ২০ জুন, ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ও ২০২২ সালের ৭ জুলাই এর নির্দেশনা পালন করতে বলা হলো।
এর আগে গত বছর ৩ ডিসেম্বর ফরিদপুরের বিসিক শিল্প নগরীতে সাকিব আল হাসানের ব্যবসায়িক সহযোগীদের নিয়ে আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ইজিএম অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় কোম্পানির দুটি এজেন্ডা অনুমোদন করা হয়েছে। এজেন্ডা দুটির মধ্যে একটি হলো- কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা এবং অপরটি পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকায় বাড়ানো। এ দুইটি সিদ্ধান্তের বিষয়ে শেয়ারহোল্ডাররা সম্মতি জানিয়েছেন।
তবে তার আগে আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ৪৮.১৭৫ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা অধিগ্রহণের মাধ্যমে পূর্বের পরিচালকদের কাছ থেকে শেয়ার বুঝে পাওয়ার পর শেয়ার ধারণের বিস্তারিত তথ্য বিএসইসিকে অবহিত করেন সাকিব ও হিরুর সহযোগীরা।
তথ্য মতে, আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আশিক ১৮.৪০ শতাংশ, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আতিকা ১৫.৯৭৫ শতাংশ ও সাবেক পরিচালক তাজাক্কা তানজিম ১৩.৮০ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছেন সাকিব ও হিরুর সহযোগীরা। এর মধ্যে সাকিবের প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে মোনার্ক মার্ট (জাভেদ এ মতিন প্রতিনিধিত্বকারী) ২.৪০ শতাংশ এবং মোনার্ক এক্সপ্রেস ৪.৮০ শতাংশ শেয়ার কিনেছে। এ ছাড়া আমিনুল ইসলাম সিকদার এবং মো. খায়রুল বাশার (ইশাল কমিউনিকেশনের প্রতিনিধিত্বকারী) ১৪.৪ শতাংশ, এএফএম রফিকুজ্জামান ১০ শতাংশ, মাসুক আলম ৬ শতাংশ, মো. হুমায়ুন কবির (লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিনিধিত্বকারী) ২.৪০ শতাংশ এবং মুন্সী শফি উদ্দিন ৮.১৭৫ শতাংশ কোম্পানিটির শেয়ার কিনেছেন।
এর মধ্যে লাভা ইলেকট্রোডস ইন্ডাস্ট্রিজ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী ও সমবায় অধিদপ্তরের উপ-নিবন্ধক আবুল খায়ের হিরুর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান।
কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আমিনুল ইসলাম শিকদার। আর কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন মুন্সি শফি উদ্দিন। একই সঙ্গে মাসুক আলম, এএফএম রফিকুজ্জামান, জাভেদ এ মতিন, খাইরুল বাশার ও হুমায়ুন কবির কোম্পানিটির মনোনীত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া সিমাব ফাহিম কোম্পানিটির স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিএসইসি ওটিসি মার্কেট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে ওটিসি মার্কেটের আওতাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে আর্থিক সক্ষমতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে এসএমই প্ল্যাটফর্ম ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিএসইসি’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজকে ওটিসি থেকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। বর্তমানে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৫০ লাখ। এরমধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৫০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২.৫৪ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৭.৪৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
এ বিষয়ে আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুন্সী শফি উদ্দিন বলেন, মূলধন বৃদ্ধির বিষয়ে বিএসইসি থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সে নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি কোম্পানিটির অধিগ্রহণ শুরু থেকে এ পর্যন্ত সকল কার্যক্রমই বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী করা হয়েছে।