

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন প্রায় ১৯ হাজার ফিলিস্তিনি। বর্বর এই আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে ক্ষোভ।
তবে ইসরায়েল বলছে, আন্তর্জাতিক সমর্থন নিয়ে অথবা ছাড়াই গাজা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে তারা। মূলত গাজায় বেসামরিক হতাহতের জেরে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছে ইসরায়েল।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক সমর্থনসহ বা ছাড়াই’ ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাবে বলে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন জানিয়েছেন। তার দাবি, সংঘাতের এই পর্যায়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি হলে তা হামাসের জন্য একটি ‘উপহার’ হবে এবং গোষ্ঠীটিকে আবারও ফিরে আসার সুযোগ দেবে।
বিবিসি বলছে, গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হাতে নিহত ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষের সংখ্যা এবং সেখানে মানবিক সংকটের কারণে ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের সমালোচনা করে বলেছেন, গাজায় নির্বিচারে বোমাবর্ষণের কারণে ইসরায়েল বিশ্বব্যাপী সমর্থন হারাচ্ছে।
অন্যান্য দিনের মতো বুধবার গাজার উত্তর ও দক্ষিণ উভয় অঞ্চলেই তীব্র লড়াই অব্যাহত ছিল। তবে ভারী বৃষ্টির কারণে অস্থায়ী তাঁবুতে বা খোলা জায়গায় বসবাসকারী কয়েক হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষের অবস্থা বুধবার আরও খারাপ হয়েছে।
জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন ত্রাণ কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, গাজার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়া এবং জনাকীর্ণ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার কারণে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ড ‘জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের’ সম্মুখীন হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এরপর থেকে টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি এই আগ্রাসনের নিহত হয়েছেন ১৮ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।
এই পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার ১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। ভোটাভুটিতে প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয় ১৫৩টি দেশ।
অন্যদিকে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রিয়া ও চেক রিপাবলিকসহ ১০টি দেশ বিপক্ষে ভোট দেয়। আর ভোটদান থেকে বিরত ছিল যুক্তরাজ্য ও জার্মানিসহ ২৩টি দেশ। যদিও সাধারণ পরিষদে পাস হওয়া এই রেজোলিউশনটি মানা বাধ্যতামূলক নয়, তারপরও এটি বৈশ্বিক মতামতের সূচক হিসাবে কাজ করে থাকে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভোট এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমালোচনার শিকার হওয়ার একদিন পর ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন সফররত এক কূটনীতিককে বলেন: ‘ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সমর্থনসহ বা ছাড়াই হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান পর্যায়ে কোনও যুদ্ধবিরতি হলে তা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হামাসের জন্য একটি উপহার হবে এবং এতে করে গোষ্ঠীটিকে ফিরে আসার এবং ইসরায়েলে বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে হুমকি সৃষ্টির সুযোগ দেবে।’