

আজ শেষ হচ্ছে হজ নিবন্ধনের বিশেষ ৮ দিন। হজ এজেন্সি ও হজে যেতে ইচ্ছুকদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ ৮ দিন সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু শেষ এই সুযোগেও বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ হজ কোটা পূরণে এখনও বাকি ৫৮ হাজারের বেশি।
চলতি বছর যারা হজে যেতে চান তারা যেন আজই নিবন্ধন করেন এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে। নিবন্ধনের সময় আর বাড়ছে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানান, গত ১৮ জানুয়ারি হজ নিবন্ধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও অনেক হাজি ও এজেন্সির অনুরোধে বিশেষ ৮ দিন দেওয়া হয়। এরপর যারা নিবন্ধন করতে পারবেন না তারা এ বছর আর হজে যেতে পারবেন না। যদি কোটা ফাঁকা থাকে তা সৌদি সরকারকে ফেরত পাঠানো হবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার কোটা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৬৮ হাজার ৫০৯ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ৫৬ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬৪ হাজার ৪৫৩ জন নিবন্ধন করেছেন। সে হিসেবে এখনও কোটা খালি রয়েছে ৫৮ হাজার ৬৮৯টি।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এই চার কোটা পূরণ না হলেও সৌদি সরকারকে ফেরত দিতে হবে। এই ফেরত দেওয়া ঠেকাতে আট দিনের সুযোগ দেয় মন্ত্রণালয়।
নিবন্ধনের সাড়া কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে হজ অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নিবন্ধন শুরু হলেও এবার শুরু হয়েছে নভেম্বর মাসে। এ কারণে হজে যেতে ইচ্ছুকদের ধারণা, সময় বাড়ানো হবে। এ ছাড়া দেশে নির্বাচন থাকায় নিবন্ধনে সাড়া কম মিলেছে। নির্বাচন শেষ হয়েছে, এখন নিবন্ধনের সংখ্যা বাড়তে পারে।
হজ এজেন্সিগুলোর মালিকরা বলছেন, হজে নিবন্ধনের সাড়া না মেলায় অন্যতম কারণ হজের মাত্রাতিরিক্ত খরচ। এর সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে দেশের টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি যোগ হয়েছে। মধ্যবৃত্ত শ্রেণির লোকজন বেশি হজ করতে যান। তাদের বেশিরভাগ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব একটা ভালো না। তারা হজে না করে এখন ওমরাহ করছেন।
অন্যদিকে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে হজযাত্রী নিবন্ধন শুরু হয়েছিল, নিবন্ধন চলে এপ্রিল পর্যন্ত। কিন্তু এবার সৌদি সরকার হজ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনায় হজ চুক্তির আগেই নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এজন্য সেপ্টেম্বর মাস থেকে নিবন্ধন শুরু হয়। তারা মনে করছেন এটা হয়তো ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চলবে। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, হজ নিবন্ধনের সময় আর কোনোভাবেই বাড়ছে না।
জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ অনুবিভাগ) মতিউল ইসলাম বলেন, ১৮ জানুয়ারি ছিল শেষ সুযোগ। সৌদি সরকার আর কোনোভাবে নিবন্ধনের সুযোগ দিতে চায় না। অনেক চেষ্টা করে নিবন্ধনের জন্য বিশেষ ৮ দিন বের করতে পেরেছি। তাই যারা হজে যেতে চান তারা যেন আজকের মধ্যে নিবন্ধন করে নেন। আর কোনো সময় বাড়বে না।
গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে এবারের হজ নিবন্ধন শুরু হয় এবং সময়সীমা ছিল গত ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে প্রথম দফা নিবন্ধনের সময় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২৫ জানুয়ারি থেকে ১ ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ায় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এদিকে যারা হজে যাওয়ার জন্য চূড়ান্ত নিবন্ধন করেছেন এমন হজযাত্রীদের ভিসার জন্য বায়োমেট্রিক শুরু হবে শিগগিরই । সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের সকল জেলার ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়, ঢাকায় অবস্থিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন আগারগাঁও, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম মসজিদ কমপ্লেক্স, ওয়াক্ফ প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকা এবং হজ অফিস, আশকোনা, ঢাকায় বায়োমেট্রিক ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা স্ব স্ব এজেন্সির মাধ্যমে এবং হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) অফিসে বায়োমেট্রিক ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। বায়োমেট্রিক ভিসা আবেদনের পর পাসপোর্ট স্ব স্ব এজেন্সির নিকট জমা প্রদান করে রশিদ গ্রহণ করবেন।