ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সে বিএনপির ব্যবসায়ীই হোক বা আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী হোক, সবাই কিন্তু শান্তিতে ব্যবসা করেছে। হাওয়া ভবনও আমরা খুলি নাই, খাওয়া ভবনও আমরা খুলি নাই বরং ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছি। আবারও হাওয়া ভবন আসলে, এখন আসলে আরেকটা নাম দিবে। আবারও চুষে চুষে খাবে। শান্তিতে ব্যবসা করতে হবে না।

বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের এক যৌথ সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

গণমাধ্যমের মালিকদের উদ্দেশে সরকার প্রধান বলেন, ‘যে সমস্ত মিডিয়া এখন ধরনা দিচ্ছে, এত টেলিভিশন—এ তো আমারই দেওয়া। আমি যদি উন্মুক্ত না করে দিতাম এত মানুষের চাকরিও হতো না এত মানুষ ব্যবসাও করতে পারত না।

তিনি বলেন, ‘আর বিএনপিকে যারা তেল মারছে, আমরা তাদেরও হিসাব করব। আওয়ামী লীগের সময় আরাম আয়েশ করে ব্যবসা করে খাচ্ছে তো, কারও ব্যবসায় আমরা বাধা দেইনি তো। সবাইকে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করতে দিয়েছি। বিএনপির আমলে তো এত আরামে ব্যবসা করতে পারেনি। এই মিডিয়া একটা উল্টাপাল্টা লিখলেই তো মারতো। তারপরেও এত আল্লাদ কীসে, এত তেল মারা কীসে, আমি তো জানি না। কত তেল আছে আমি দেখব!’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এবার যেন আর কোনো বিআরটিসির বাস পোড়াতে না পারে। যেটা পোড়াতে যাবে, এখন তো সবার হাতে ক্যামেরা, ভিডিও ফুটেজ দেখে যেই হাতে আগুন দেবে, সেই হাত সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে দিতে হবে। কোনো দিন বলিনি এখন বলব—আর মার খাওয়ার সময় নাই।’

কারও গায়ে হাত দিলে আর ক্ষমা করা হবে না জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘এরা (বিএনপি) কীভাবে অত্যাচার করেছে, সেটা তুলে ধরতে হবে। বিএনপির অপকর্ম তুলে ধরতে হবে। আমাদের যেসব নেতা কর্মীরা বিএনপির হাতে মার খেয়েছে তাদের বসে থাকলে তো চলবে না। মানুষকে জানাতে হবে ওরা কী করতে পারে, কী করে। বসে বসে আর মার খাওয়া যাবে না, এটাও ঠিক।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জানান, তাঁর দল প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে যে অত্যাচারটা আমাদের নেতা কর্মীদের ওপর করেছে, আমরা ২০০৯–এ ক্ষমতায় আসার পর গুণে গুণে সেই অত্যাচারের জবাব দিতে পারতাম, সেই ক্ষমতা আওয়ামী লীগ রাখে। কই আমরা তো করি নাই। আমরা তো তাদের ওপর এই ভাবে অত্যাচার নির্যাতন করতে যাইনি।’

সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের পাড়া মহল্লায় সতর্ক অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই পঁচাত্তর থেকে একুশ বছর শুধু মার খেয়েছি। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত শুধু মার খেয়েছি। এবার যে হাত দিয়ে মারবে সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে মানুষকে আগুন দিতে আসবে সেই হাত আগুনে পোড়াতে হবে। পোড়ার যন্ত্রণাটা তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। এখনো পোড়া মানুষগুলোর অবস্থা দেখলে চোখে পানি আসে। মা দেখে চোখের সামনে স্বামী সন্তান পুড়ে যাচ্ছে। এদের কিসের ক্ষমা, এদের আর ক্ষমা নাই।’

বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না উল্লেখ করে নেতা কর্মীদের প্রতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা আমার পরিষ্কার কথা। প্রত্যেকটা এলাকায় নেতা কর্মীদের মাঠে থাকতে হবে। আর আমাদের যতগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে তাদের বলতে হবে তারা কি শান্তিতে থাকতে চায়? নাকি আবার অশান্তিকে জায়গা দিতে চায়। তাদের সিদ্ধান্ত দিতে হবে। জ্বালাও পোড়াও হত্যা খুন মানি লন্ডারিং এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের শান্তিকে বিনষ্ট করতে দেওয়া হবে না। সবাই প্রস্তুত থাকবেন, বাংলাদেশের কোনো মানুষের একটা ক্ষতিও যেন করতে না পারে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘দোকানপাট সবাইকে বলে দেবেন তারাও যেন প্রতিবাদ করে। এর আগে বহু যন্ত্রণা দিয়েছে তারা। আমরা অনেক সহ্য করেছি। এইভাবে আমার কৃষক শ্রমিক আমাদের নেতা কর্মী কারও গায়ে হাত দিলে আর ক্ষমা নাই।’

বাংলাদেশের বিষয়ে বিদেশিদের কথা বলার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেসব দেশ আমাদের দেশের গণতন্ত্রের কথা বলে, তাদের দেশের অবস্থাতো আমরা জানি, প্রতিদিন মানুষ খুন হয়, ভোটের সময় ভোট চুরি হয়েছে বলে তাদের ক্যাপিটল হিলেও আক্রমণ হয়, পাঁচ-ছয় জন গুলি করে মারে, আর তাদের কাছ থেকে আমার গণতন্ত্রের ছবক নিতে হবে? বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।’

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...