নভেম্বর ২৬, ২০২৪

১৯৪৯ থেকে ২০২৪, এই ৭৫ বছরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে তার কন্যা শেখ হাসিনাসহ অনেক নেতা। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে এমন ভিত গড়ে দিয়ে গেছেন, যা এ দলকে মাটি ও মানুষের সংগঠনে পরিণত করেছে। অন্যদিকে, তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আওয়ামী লীগকে যেমন সুসংগঠিত করেছে, তেমনই মানুষের আশা-ভরসার সংগঠনে রূপ নিয়েছে দলটি।

বঙ্গবন্ধুকে হারানোর পর ৪৩ বছর আগে শেখ হাসিনাকে যখন তার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়, তখন ভাঙনের মুখে দলটি। সেই অবস্থান থেকে আজ আওয়ামী লীগকে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পুরো কৃতিত্ব শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে ক্রমেই দুর্বল হতে থাকা আওয়ামী লীগকে পুনর্জীবন দিয়েছেন তিনিই। এর মধ্যে টানা ৪৩ বছর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব সামলে আসছেন শেখ হাসিনা।

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ এ সম্পর্কে এক লেখায় বলেছেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ মোটামুটি ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছিল। দলের মধ্যে ছন্দটা হারিয়ে গিয়েছিল। মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে আলাদা আওয়ামী লীগ, এমন পরিস্থিতিতে দল আবার ভাঙার অবস্থা হয়েছিল।’

তিনি লিখেন, ‘দলকে এক রাখার জন্যেই দলের কয়েকজন নেতা দিল্লিতে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনার সাথে পরামর্শ করতে এবং তারা তাকে রাজি করান সভাপতির পদ নিতে।’

শেখ হাসিনা এবং ওয়াজেদ মিয়া যখন ভারতে অবস্থান করছিলেন, তখন ১৯৭৯ ও ১৯৮০—এই দুই বছরের বিভিন্ন সময়ে কয়েকজন সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা দিল্লিতে যান তাদের খোঁজ-খবর নিতে।

প্রয়াত এম এ ওয়াজেদ মিয়া তার বইতে লিখেছিলেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক কাবুল যাওয়ার সময় এবং সেখান থেকে ফেরার সময় আমাদের সাথে দেখা করেন। আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমান, আব্দুস সামাদ আজাদ, তৎকালীন যুবলীগ নেতা আমির হোসেন আমু এবং তৎকালীন আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দিল্লিতে যান। তাদের সে সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল—শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিতে রাজি করানো।

১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারির সম্মেলনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৭৫ সালে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, সে সময় বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন কেবল শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা। পরবর্তীতে তিনি আশ্রয় পান ভারতে। প্রবাসে ছয় বছর অতিবাহিত করার পর ১৯৮২ সালেল ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। সেই দিনটি আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে ছিল বিশেষ কিছু। যেন বঙ্গবন্ধুকে আবার ফিরে পাওয়া!

সেই যে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছেন, সেই থেকে ক্লান্তিহীনভাবে বয়ে চলেছেন নৌকা। আর নৌকার যাত্রীরা তাকিয়ে থাকেন তার দিকে; কখন কোন দিকে হবে তাদের যাত্রা। বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে কর্মীদের কাছে শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেন কখনো জননেত্রী, কখনো মানবতার নেত্রী, কখনো খুব পরিচিত প্রিয় সেই ‘আপা’।

আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলন: ২৩ ও ২৪ জুন, ১৯৪৯
সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।

দ্বিতীয় সম্মেলন: ১৪ থেকে ১৬ নভেম্বর, ১৯৫৩
সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।

তৃতীয় সম্মেলন: ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর, ১৯৫৫
সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।

চতুর্থ সম্মেলন: ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৭
সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।

বিশেষ সম্মেলন: ১৩ ও ১৪ জুন, ১৯৫৭
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।

পঞ্চম সম্মেলন: ৬ ও ৮ মার্চ, ১৯৬৪
সভাপতি মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।

ষষ্ঠ সম্মেলন: ১৮ থেকে ২০ মার্চ, ১৯৬৬
সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ।

সপ্তম সম্মেলন: ১৯৬৮
সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ।

অষ্টম সম্মেলন: ৪ জুন, ১৯৭০
সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ।

নবম সম্মেলন: ৭ ও ৮ এপ্রিল, ১৯৭২
সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।

দশম সম্মেলন: ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি, ১৯৭৪
সভাপতি এ এইচ এম কামারুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।

একাদশ সম্মেলন: ৩ ও ৪ এপ্রিল, ১৯৭৭
আহ্বায়ক: সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। তবে, এর আগে ১৯৭৬ সালে দল পুনরুজ্জীবনের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মহিউদ্দিন আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন।

দ্বাদশ সম্মেলন: ৩ থেকে ৫ মার্চ, ১৯৭৮
সভাপতি আবদুল মালেক উকিল এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক।

ত্রয়োদশ সম্মেলন: ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১
সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক। রাজ্জাককে বহিষ্কার করা হলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন।

চতুর্দশ সম্মেলন: ১ থেকে ৩ জানুয়ারি, ১৯৮৭
সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

পঞ্চদশ সম্মেলন: ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৯২
সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।

ষষ্ঠদশ সম্মেলন: ৬ ও ৭ মে, ১৯৯৭
সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান।

সপ্তদশ সম্মেলন: ২৬ ডিসেম্বর, ২০০
সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল।

অষ্টাদশ সম্মেলন: ২৪ জুলাই, ২০০৯
সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

ঊনবিংশ সম্মেলন: ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২
সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

বিংশ সম্মেলন: ২২-২৩ অক্টোবর, ২০১৬
সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

একবিংশ সম্মেলন: ২০-২১ ডিসেম্বর, ২০১৯
সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

দ্বাবিংশ সম্মেলন: ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২
সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

উল্লেখ্য, ১৯৫৭ সালের চতুর্থ সম্মেলন হয়েছিল টাঙ্গাইলের কাগমারীতে। বাকি সব সম্মেলন হয়েছিল ঢাকায়।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...