এবার মার্কিন সাবেক দুই কূটনীতিক মার্কিন আইন ভঙ্গ করে আইনি গ্যাড়াকলে পড়েছেন। তারা হলেন- উইলিয়াম বি. মিলাম এবং জন ড্যানিলোভিজ। মার্কিন আইন লঙ্ঘন করার দায়ে তারা শাস্তি পেতে পারেন। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পক্ষে লবিস্ট হিসেবে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে।
২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাাব) এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। বাহিনীর সাতজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অভিযোগ করে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পরে সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল অভিযোগ করে যে, বিরোধী দল লবিস্ট নিয়োগ করে র্যাবের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছে। আর এই লবিস্টরা নিষেধাজ্ঞার পেছনে চালিকা শক্তি ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের লবিং ব্যয় ডেটাবেস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০০৭ সাল থেকে শুরু করে বিএনপি পর্যায়ক্রমে আটটি লবিং ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করে। তাদের দলের প্রধান লবিস্ট ফার্ম ছিল ব্লু স্টার এবং সাব-কন্ট্রাক্টর রাস্কি পার্টনার্স। সম্প্রতি মার্কিন দুই সাবেক কূটনীতিক উইলিয়াম বি মিলাম ও জন ড্যানিলোভিজ বিএনপির পক্ষে লবিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। তবে তারা মার্কিন আইন অনুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে লবিস্ট হিসাবে তালিকাভুক্ত না হয়েই এভাবে কাজ করেছে। এতে করে দেশটির ফরেন এজেন্ট রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট (এফএআরএ)-এ বর্ণিত প্রবিধান লঙ্ঘন হয়েছে।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস বলছে, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এফএআরএ লঙ্ঘন করে, তবে তাদের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার জরিমান বা উভয় দণ্ড হতে পারে। তবে ছোট পরিসরে এ আইন লঙ্ঘন করলে ছয় মাসের জেল বা ৫ হাজার ডলার জরিমান বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
উইলিয়াম বি. মিলাম, জন ড্যানিলোভিজ এবং একজন ব্রিটিশ নাগরিক মুশফিকুল ফজল আনসারির ক্রিয়াকলাপ এফএআরএ লঙ্ঘনের দিকেই ইঙ্গিত করে। কেননা তারা গণমাধ্যমের সোর্স হওয়ার কথা বলে স্পষ্টত বিএনপির মতো অতি-ইসলামবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী দলের হয়ে কাজ করেছে। তারা সংবাদের উৎস হওয়ার অজুহাতে লবিস্ট হিসাবে তাদের ভূমিকা অস্পষ্ট করে। বাস্তবে এ সব সংস্থা নিঃসন্দেহে একটি অতি ইসলামবাদী এজেন্ডা দ্বারা চালিত হয়ে বিএনপি জন্য লবিস্ট হিসাবে কাজ করছে। অথচ এফএআরএ’র অধীনে মার্কিন আইন অনুযায়ী, বিদেশিদের তথ্য দেওয়া বা তাদের হয়ে কাজ করতে হলে তাদের রেজিস্ট্রেশনের স্বচ্ছ ডকুমেন্ট থাকতে হবে। তাদের কার্যকলাপ থেকে অর্জিত অর্থের বিবরণ এবং ব্যয়গুলোর স্বচ্ছ বিবরণ দিতে হয়। কিন্তু উইলিয়াম বি. মিলাম, জন ড্যানিলোভিজ ও মুশফিকুল আনসারে এফএআরএ’র অধীনে লবিস্ট হিসাবে নিবন্ধনের আইনি প্রয়োজনীয়তা মেনে চলেননি না বলে মনে হচ্ছে।
জন ড্যানিলোভিজ আগে বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসে ডেপুটি চিফ অব মিশন হিসাবে কাজ করেছিলেন। তিনি ইসলামপন্থী ও জিহাদিদের পক্ষে প্রচারকারী হিসাবে পরিচিত। এখন তিনি সক্রিয়ভাবে ‘রাইট অব ফ্রিডম’ নামের একটি গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত। তিনি বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কাছ থেকে অর্থ পান বলেও অভিযোগ রয়েছে। তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছিলেন বলেও তথ্য রয়েছে।
জন ড্যানিলোভিজের টুইটার অনুসারে, তিনি বাংলাদেশ এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরোধিতায় সক্রিয়ভাবে নিযুক্ত। বাংলাদেশ সম্পর্কে ক্ষতিকারক ও ভুল তথ্য ছড়ানোকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তিনি। নেতিবাচক তথ্য প্রচারের চলমান প্রচারণার পাশাপাশি, জন সম্প্রতি তার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে ‘সাউথ এশিয়া পারসপেক্টিভস’ নামে বাংলাদেশ সম্পর্কে অবমাননাকর বিষয়বস্তু প্রকাশ করেছেন।
মুশফিকুল আনসারে উইলিয়াম বি মিলামের সঙ্গে ‘জাস্ট নিউজ’ নামে একটি অননুমোদিত ওয়েবসাইটের ‘স্থায়ী সংবাদদাতা’ হিসাবে কাজ করতেন। মিলার ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব। মিলারের সঙ্গে ‘রাইট অব ফ্রিডম’ পরিচালনা করেন আনসারে। বাংলাদেশ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দল ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বানোয়াট তথ্য ছাড়ানোই ছিল তাদের কাজ।
তারেক রহমানের কুখ্যাত হাওয়া ভবনের প্রেক্ষাপটে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হন আনসারে। তিনি খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সহকারী প্রেস সচিবের দায়িত্বে ছিলেন।
যদিও, প্রাথমিক ফোকাস বিএনপির লবিংকে ঘিরে নয়, বরং অর্থের উৎস ঘিরে। ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এক বিবৃতিতে বলেন, বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের জন্য ৩.৭ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। এ কাজে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বিএনপি প্রতি বছর ২.৭ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইটগুলিতে প্রকাশিত হয়েছে।
উদ্বেগের বিষয় হলো, লবিস্ট নিয়োগে আন্তর্জাতিকভাবে তহবিল স্থানান্তরের আইনি জটিলতা রয়েছে, এর মধ্যে বিএনপি কীভাবে তা করলো? বিষয়টি সরকার তদন্ত করছে।