আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবল-আইএমএফ বাংলাদেশের অনুকূলে ঋণের তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১ দশমিক ১১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড় করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে এ অর্থ আইএমএফ থেকে ছাড় করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়াশিংটনের হিসাবে স্থানান্তর করা হবে। এ অর্থ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ-এ যোগ হবে।
সোমবার (২৪ জুন) সংস্থাটির পর্ষদ সভায় এ ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করেছে।
আইএমএফের ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার এসেছে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। আর দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে প্রায় ৬৮১ মিলিয়ন ডলার আসে গত বছরের ডিসেম্বরে।
বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের চাপের মুখে পড়ে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ)। বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ে ক্রমাগত চলতি হিসাবের ঘাটতিও বেড়েছিল বাংলাদেশের। ডলারের বিপরীতে টাকা দর অবনমন হতে থাকলে প্রভাব পড়ে জ্বালানির দর ও আমদানিতে।
তখন দ্রুত ক্ষয় হতে থাকা রিজার্ভ বাড়াতে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার সহায়তা নিতে আইএমএফ এর কাছে ৪৭০ কোটি ডলারের এই ঋণ চেয়ে আবেদন করে ২০২২ সালের জুলাইতে। বিভিন্ন ধাপের আলোচনার পর ওই ওই বছরের নভেম্বরে ঋণ চুক্তি অনুমোদন দেয় সংস্থাটি।
সামান্য বেড়েছে রিজার্ভ
পরে ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। এর তিন দিন পর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। এর পর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির পরবর্তীগুলোতে সমান অর্থ থাকার কথা ছিল। কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে যাওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তিতে বেশি অর্থ চায় বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কঠিন শর্তের বাস্তাবয়ন ও আগামীতে আরও বড় সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সংস্থাটি তৃতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ডলারের পরিবর্তে ১১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। তবে মোট ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ একই থাকবে।
বাংলাদেশের অনুরোধে চতুর্থ কিস্তির জন্য আগামী জুন শেষে নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশশিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক শর্ত পূরণ করার পথে থাকলেও ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর থেকে রিজার্ভের ত্রৈমাসিক কোনো লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। সরকারের অনুরোধে আইএমএফ পরে সংশোধন করে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। বিপিএম ৬ হিসাবে ১৯ দশমিক ৫২ বিলয়ন। সেখান থেকে চলতি দায় বাবদ ৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন বাদ দিলে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। যা আইএমএফের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন থেকে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার কম।