

ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। বাড়তি চাহিদা ও সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে ঈদের আগে শেষ শুক্রবার ফের অস্থির হয়ে উঠেছে রাজধানীর মুরগির বাজার। আজ শুক্রবার (৫ এপ্রিল) কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, আগানগর এবং রাজধানীর কারওয়ানবাজার ও হাতিরপুল কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে, সপ্তাহ ব্যবধানে মুরগির মাংসের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২৬০ টাকা ও দেশি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।
বাজারে প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩৩০-৩৭০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০-৭০০ টাকা, ব্রয়লার ২৩০-২৬০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৮০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৫০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, ঈদের কারণে চাহিদা বেড়েছে মাংসের। যা সরবরাহের তুলনায় অনেক বেশি। এতে বাড়ছে দাম।
কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারের মুরগি বিক্রেতা রিপন বলেন, ‘মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়েছে। পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে বেড়েছে চাহিদাও। সব মিলিয়ে বাড়তি মুরগির দাম।’
রাজধানীর হাতিরপুল বাজারেরর দরবার ট্রেডার্সের মুরগি বিক্রোতা জানান, ঈদের জন্য মুরগির চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই দাম বেড়েছে।
ঈদের পর দাম কমতে পারে কি না জানতে চাইলে কারওয়ানবাজারের মামা-ভাগিনা চিকেন ব্রয়লার হাউসের বিক্রেতা মো. জয়নাল জানান, ঈদের কারণে বাজারে মুরগির চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়েছে। তাছাড়া বেড়েছে মুরগির উৎপাদন খরচও। ফলে ঈদের পর দাম কমবে কি না, বলা মুশকিল।
এদিকে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘করপোরেট গ্রুপগুলোর কৃত্রিম সংকটে মুরগির বাচ্চা ক্রয় করতে না পেরে উৎপাদন থেকে বাধ্য হয়ে সরে যাচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা। মুরগির বাজারের এখন বেশিরভাগ মুরগি হচ্ছে করপোরেট গ্রুপগুলোর। বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। ফলে বাজারে মুরগির দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।’
সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে করপোরেট গ্রুপদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে উল্লেখ করে সুমন বলেন, প্রান্তিক খামারিরা বিপর্যয়ের মুখে। অসাধু কর্মকর্তা ও করপোরেট গ্রুপকে আইনের আওতায় এনে প্রান্তিক খামারিদের সুরক্ষা দিয়ে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে হবে সরকারকে। তা না হলে মহাবিপর্যয়ে পড়বে প্রান্তিক পোল্ট্রি শিল্প। জিম্মি হয়ে পড়বেন ১৭ কোটি ভোক্তা।
প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়ছে জানিয়ে বিপিএ সভাপতি আরও বলেন, একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করতে খরচ হয় ২৮ থেকে ৩০ টাকা। অথচ প্রান্তিক খামারিদের সেই বাচ্চা কিনতে হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির ফিড উৎপাদন করতে খরচ হয় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, কিন্তু প্রান্তিক খামারিদের সেই ফিড কিনতে হয় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে। আর এক কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন করতে খরচ হয় ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা।
এদিকে বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতিকেজি খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।