নভেম্বর ১৫, ২০২৪

নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করে। সে হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার ১০০ দিনে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১০০ দিনের কার্যক্রম ও অর্জনগলো তুলে ধরা হলো:

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত নানা প্রকল্প প্রণয়ন, ব্যয় নির্ধারণ, টেন্ডার প্রক্রিয়া, কাজের গুণগতমান বজায় রাখা, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প সমাপ্ত করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুনীর্তি প্রতিহত করা এবং দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এসব পদক্ষেপ সংক্রান্ত আরো কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগস্ত এলাকায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উপকূলীয় পোল্ডার, নদী তীর এবং অন্যান্য অবকাঠামোর তালিকা প্রণয়ন করে প্রাথমিক প্রাক্কলনসহ একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে প্রায় ৮৯ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত করা হয়েছে। এছাড়া আরো ৫৬ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে।

অন্যদিকে নোয়াখালী জেলার মুসাপুর রেগুলেটর পুনঃনির্মাণ ও বামনি ক্লোজার নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে সম্ভাব্য সমীক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া-ফেনী অববাহিকায় সমীক্ষার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সুপারিশের আলোকে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

নদ-নদী ও খালের স্বাভাবিক প্রবাহ বিভিন্ন সংস্থা বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে অবকাঠামো নির্মাণ বা অবৈধ দখলের ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে এমন অবকাঠামো ও নির্মাণকারীদের তালিকা ইতোমধ্যেই সংগ্রহ করা হয়েছে। নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও দূষণমুক্ত করার কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও সব নদীর জন্য হেলথ কার্ড প্রস্তুতের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

জেলা ভিত্তিক নদী দখল ও দূষণমুক্তকরণের কর্মপরিকল্পনা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্লাস্টিক দূষণ আক্রান্ত নদ-নদীর তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে।

এ তিন বিষয় সমাধানের লক্ষ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, বিআইডব্লিউটিএ, সব বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে সভা করে কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়েছে।

এদিকে জাতীয় যুব দিবস- ২০২৪ উপলক্ষে ১ নভেম্বর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৬৪ জেলায় ১টি করে মোট ৬৪ টি খাল পরিস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয় যা ১৫ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

নদীর সঠিক সংখ্যা নিরূপণে নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা বিবেচনা করে নদীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে বিভাগওয়ারি তালিকা অনুযায়ী নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে আট বিভাগের কমিশনার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীরা স্টেক হোল্ডারদের সাথে সভা করে বিভাগীয় পর্যায়ের নদীর তালিকা করেছেন।

এক্ষেত্রে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় নদী কমিশনের ওয়েবসাইটে তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে জনগণের মতামত নিয়ে নদীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।

ভবদহ বিল এলাকায় জলবদ্ধতা সমস্যার সার্বিক সমাধানের লক্ষ্যে সামগ্রিকভাবে আমডাঙ্গা খাল উন্মুক্তকরণসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের জন্য এ খালকে একটি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।

ভবদহ বিলের জলাবদ্ধতা প্রশমনে ইতোমধ্যে দুটি ভাসমান খনন যন্ত্রসহ মোট ৯টি খনন যন্ত্রের মাধ্যমে হরি নদী পুনঃখনন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

ঢাকার চারপাশের নদ ও নদীসমূহের দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। বালু নদীর পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রিন্সিপ্রাল কমপোন্যান্ট এনালাইসিসের মাধ্যমে ওয়াটার কোয়ালিটি ইনডেক্স (ওয়াইকিউআই) নিরূপণের প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পূর্বাভাস পদ্ধতি বিশ্লেষণপূর্বক পূর্বাভাস প্রদানে তথ্য-প্রযুক্তির যুগোপযোগী ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, বন্যার সম্ভাব্য মাত্রা অনুযায়ী সিগনালিং বা অ্যালার্ট সিস্টেম চালুকরণ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে সম্ভাব্য বন্যা ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় টোল ফ্রি এসএমএস ব্যবস্থা চালুকরণ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় অন্তর্বর্তী সরকারের এই ১০০ দিনের কাজের অংশ হিসেবে প্রশাসনিক সংস্কার কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে জাতীয় পানি নীতি-১৯৯৯ হালনাগাদ করার কার্যক্রম গ্রহণ করা করেছে।

বাংলাদেশ পানি আইন-২০২৩ মোবাইল কোর্টের তফসিলভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জনগণের পানি অধিকার নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশ পানি আইন-২০১৩-এর প্রচার এবং সংশোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সময়াবদ্ধ সংস্কার কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সময়াবদ্ধ সংস্কার কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তব কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। দেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ত্বরান্বিত করতে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হচ্ছে।

তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে বাপাউবোর আপৎকালীন জরুরি কাজে তদারকির জন্য তরুণদেরকে অন্তভূুক্ত করা হয়েছে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল করিম বাসসকে জানান, এ মন্ত্রণালয়ের ৯১টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এগুলো উন্নয়ন প্রকল্প। নতুন কোন প্রকল্প গত তিন মাস ১০ দিনে অনুমোদন পর্যায়ে যায়নি। কেননা অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের কারণে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

চলমান প্রকল্পগুলো পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশনার আলোকে উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন অগ্রাধিকারভুক্ত করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেচ, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট এবং বর্তমান অর্থবছরে সমাপ্য বিবেচনায় ৩৮টি প্রকল্পকে উচ্চ অগ্রাধিকারে রাখা হয়েছে। এছাড়া ৪৩টি প্রকল্পকে মধ্যম এবং ১০টি প্রকল্পকে নি¤œ অগ্রাধিকারে রাখা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, এই ৯১টি প্রকল্পের মধ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়ন করছে ৮৮টি, পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা ১টি এবং বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর ২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপিভুক্ত (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) প্রকল্পসমূহের অনুকূলে মোট বরাদ্দ ৮৩৩৭.০৯ কোটি টাকা (স্থানীয় ৭৮২৮.৩৫ কোটি টাকা) এবং বৈদেশিক সাহায্য ৫০৮.৭৪ কোটি টাকা। থোক বরাদ্দ ৩৫০ কোটি টাকা।

এছাড়া চলমান প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা অর্থ সাশ্রয়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকার খালগুলোর প্রবাহমানতা ফিরিয়ে আনতে খাল পুনরুদ্ধার করে দখল-দূষণমুক্ত এবং খাল কেন্দ্রিক ব্লু নেটওয়ার্ক গঠন করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমানে তা কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়নের পর্যায়ে রয়েছে।

এ লক্ষ্যে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি ওয়ার্কিংগ্রুপ গঠন করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পানি সম্পদ অবকাঠামো মেরামত ও পুনঃনির্মাণের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি করণীয় বিষয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (ফিজিবিলিটি স্টাডি) প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্বল্প ও মধ্যম মেয়াদে জরুরী পুনঃগঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক ৫৫০০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে।

এছাড়া চলতি বছরে ইমার্জেন্সি ফ্লাড রিকভারি, রিকন্সট্রাকশন এন্ড রেস্টোরেশন (বিডব্লিউডিবি-পার্ট) প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে সম্ভাব্যতা সমীক্ষাসহ ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার এন্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট (সিএসএডব্লিউএম) প্রজেক্টে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বোপাউবো) আওতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...