সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪

গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতে রাঙামাটি জেলার কাপ্তাইয়ে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। কাপ্তাইয়ের বেশ কিছু এলাকায় পাহাড় ধস ও গাছ পড়ে সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। আবার কিছু নিম্নাঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। টানা বর্ষণে কাপ্তাইয়ে ৪৮ স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে ও ১৭১ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় তৎপর রয়েছে প্রশাসন।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) কাপ্তাই উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় বর্ষণে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখা গেছে। এছাড়া কাপ্তাইয়ের প্রধান সড়কেই বিশাল বড় বড় গাছ পড়ে এবং পাহাড় ধসে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে সড়ক ও জনপদ বিভাগকে রাঙামাটি বিভিন্ন জায়গায় মাটি অপসারণে কাজ করতে দেখা গেছে।

চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন:

কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নে বেশ কিছু এলাকায় রোববারই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও বিভিন্ন বসতবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি দেখা গেছে। চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের বড়ইছড়ি এলাকা এবং কলেজ গেইট এলাকায় পাহাড় ধসে অনিল তনচংগ্যা ও রফিকুল ইসলাম সুমন নামের দুইজনের বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অনিল তনচংগ্যা জানান, রোববার ভারী বর্ষণে বাসার পিছনে পাহাড় ধসে রান্নাঘরসহ অর্ধেক ভেঙে ছড়াতে পড়ে যায়। একই ইউনিয়নের কলেজ গেইট এলাকার সুমনের বাসায় সোমবার সকালে পাহাড় ধসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তারা প্রাণে বাঁচলেও জিনিসপত্রের বেশ ক্ষতি হয়েছে বলে জানান সুমন।

এছাড়া চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের রেশম বাগান এলাকা কয়েকটিস্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন মিলন জানান, তিনি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে রয়েছেন।

কাপ্তাই ইউনিয়ন:

কাপ্তাই ইউনিয়নে পাহাড় ধসের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকাইয়া কলোনি, আফসারের টিলা, বাংলা কলোনিসহ বেশ কিছু এলাকা। সেখানে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে গেলেও অনেক পরিবার এখনো ঝুঁকি নিয়ে বাসাবাড়িতে রয়ে গেছে। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বৃষ্টি আরো বাড়লে, পরিস্থিতি খারাপ হলে তখনই তারা যাবেন।

অন্যদিকে কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রধান শিক্ষক মাহাবুব হাসান বাবু জানান, ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের আশ্রয় কেন্দ্রে আসার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। এছাড়া বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনের প্রচারনায় অনেকেই সচেতন হচ্ছে। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে ৮৫টি পরিবারের ৩৪৪ জন আশ্রয় নিয়েছে। তাদের জন্য খাবার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন।

রাইখালী ইউনিয়ন:

টানা বর্ষণে কাপ্তাইয়ের রাইখালী ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে কর্ণফুলী নদীর পানি বিপদসীমার অনেক কাছে। কর্ণফুলী নদীতে তীব্র স্রোত দেখা দিয়েছে। এতে রাইখালী ইউনিয়ন সংলগ্ন চন্দ্রঘোনা ফেরি পারাপার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। যার ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে জীবন জীবিকার তাগিদে অনেক মানুষকে ছোট ছোট বোটে নদী পারাপার হতে হচ্ছে। এছাড়া টানা বর্ষণে কয়েকদিন আগে থেকেই ফেরির পাঠাতন ডুবে গেছে রাইখালীতে। অন্যদিকে রাইখালীর বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল ও সড়কে পানি উঠেছে। এতে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

এদিকে আজ (মঙ্গলবার) সকালে কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও এলাকা পরিদর্শন করেছেন কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন। তিনি এ বিষয়ে জানান, টানাবর্ষণে কাপ্তাই উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে টানা বর্ষণে কাপ্তাইয়ের ৪৮টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে, প্রায় ১৭১টি বসতবাড়ি এবং ৫০ একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাপ্তাইয়ে ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং যেখানে ৩শ ৫৭ জন অবস্থান করছেন। উপজেলা প্রশাসনের রেসপন্স টিম যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *