সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসের পর আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে পুরো বিষয়ের জন্য উপ-উপাচার্যকে দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন। বৈঠকে সাত কলেজের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা কলেজের দুজন ও ইডেন মহিলা কলেজের একজন শিক্ষার্থী।
বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘ছয় দফা দাবির একটি মেনে নেওয়া হয়েছে। বাকি ৫ দাবি মেনে নেওয়ার আল্টিমেটাম ছিল। দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করে ধীরে ধীরে মানা হবে।’
তিনি বলেন, ‘উপ-উপাচার্য মামুন স্যার সাত কলেজের আর কোনো কার্যক্রমে জড়িত থাকবেন না। পদত্যাগের বিষয় ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে বসে আলোচনা হবে। শিক্ষার্থীদের মারধর ও কটূক্তির বিষয়েও আলোচনা হবে। তিন দিনের মধ্যে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবের ওপর হামলার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবার প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।’
উপ-উপাচার্যকে দায়ী করে মঈনুল বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র ও তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে সাত কলেজের কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলো। পুরো বিষয়ের জন্য উপ-উপাচার্যকে দায়ী মনে করি।’
এ সময় ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন মৌ বলেন, ‘সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয় পাচ্ছে। সব দাবি মেনে নেওয়া হবে বলে আশাবাদী।’
এর আগে গত রোববার পাঁচ দফা দাবি নিয়ে কথা বলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীরা জানান, ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি বাতিলসহ পাঁচ দাবির অগ্রগতি জানতে তারা অধ্যাপক মামুনের সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় অধ্যাপক মামুন ছাত্রদের অপমান-অপদস্থ করে বের করে দেন। এরপর সেখান থেকে বের হয়েই এর প্রতিবাদে শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব ও টেকনিক্যাল মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন তারা।
এর প্রায় সাড়ে চার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হন তারা। এসব শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদের বাসভবন ঘেরাও করতে যান। এ সময় স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থীরা হলের সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে হয়েছে পুলিশকে। চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয় ওই এলাকায়। আহত হন বেশ কয়েকজন।
রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে নীলক্ষেত মোড়ে সংবাদ সম্মেলনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সোমবার নিজ নিজ কলেজের সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি দেন।
এ পরিস্থিতিতে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে একটি জরুরি সভায় করেন। সভা শেষে উপাচার্য জানান, অধিভুক্ত সরকারি ৭ কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হবে না। চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। কিন্তু উপ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাকে পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়া হয়।