ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪

বাজার নিয়ন্ত্রণে গত সেপ্টেম্বরে ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু সে সময় উল্টো দাম বেড়ে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে এ দুটি পণ্যের বাজার। নানা অভিযান ও সভা শেষে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে এলেও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে ফের উত্তাপ বাড়ছে মুরগির বাজারে। যা এখনও চলছেই।

আজ শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মুরগি কিনতে এসে বিপাকে পড়ছেন ক্রেতারা। হিসাব মেলাতে পারছেন না কেউ। বিশেষ করে মুরগীর বাজারে এই চিত্র বেশি দেখা দিচ্ছে। দামের এ উত্তাপ অব্যাহত রয়েছে বছরের শেষ সপ্তাহেও।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত দুসপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির দাম। অন্যান্য মুরগির দামও ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২২০ টাকা ও সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৫০ টাকায়। এছাড়া, প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০-২৪০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬৫০ টাকায়। মুরগির বাজারের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় বিপাকেপড়া সাধারণ মানুষ বলছেন, হঠাৎ করেই বছরের শেষ সময়ে এসে মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এতে বাসায় খাওয়ার পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠান করতে বেগ পেতে হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমই এর মূল কারণ। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী দিদার জানান,বিয়ে, জন্মদিন ও পিকনিকের মতো সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে গেছে। এছাড়া, সামনে থার্টি ফাস্ট নাইট আসছে। এসব অনুষ্ঠানে প্রচুর মুরগির ব্যবহার হয়। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে দাম কমার সম্ভাবনা নেই। এসব অনুষ্ঠানের চাপ শেষে চাহিদা কিছুটা কমলে বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। তখন দাম কমে আসবে।

মুরগির দাম বাড়লেও বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে ডিম এবং গরু ও খাসির মাংসের দাম। ডজন প্রতি ৫ টাকা কমে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৩৫-২৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।

বাজার করতে আসা রাজধানীর পুরান ঢাকার আকরাম হোসেন বলেন, ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে মুরগি কিনতে এসে দেখি কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে দাম। এতে বাধ্য হয়ে পরিমাণে কম কিনতে হচ্ছে। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগেও মুরগির দাম এতো ছিল না। প্রতি বছরই এ সময়টায় এসে নানা অজুহাতে মুরগির বাজার অস্থির করে তোলেন ব্যবসায়ীরা। এবারও সে একই পথে যাচ্ছে বাজার। এখনই পদক্ষেপ না নিলে বাজার ফের নাগালের বাইরে চলে যাবে। মুরগির বাজারে এ অস্থিরতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খোন্দকার মো. মহসিন বলেন, বাজারে মুরগির সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। বিয়ে, জন্মদিন ও থার্টিফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে চাহিদা বাড়ায় সাময়িক দাম বেড়েছে। উৎসবের ভাবটা কেটে গেলে দাম কমে যাবে।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রান্তিক খামারিদের স্বার্থ রক্ষা না হওয়ায় মুরগির উৎপাদনে সংকট চলছে। ভোক্তা পর্যায়ে ২০০ টাকা ব্রয়লার মুরগির যৌক্তিক মূল্য। এর থেকে দাম কমিয়ে রাখতে হলে ফিড ও বাচ্চার দাম কমানোর বিকল্প নেই। করপোরেট কোম্পানির লাগাম টেনে ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম স্থির করতে হবে। একদিকে মুরগির দাম বেড়ে গেছে, অন্যদিকে মুরগির বাচ্চার দামও বেড়েছে। এটিও দেখতে হবে। করপোরেট কোম্পানিগুলো সরকারের নীতিমালা মানছে না।

তিনি বলেন, বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে মূলত সিন্ডিকেটের কারণে, যা খামারিদের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পোল্ট্রি শিল্পের এ বিশাল সংকটে সরকারকে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে। সরকার যদি বাজারের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, তবে বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে এবং প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে। মুরগির দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ভোক্তাদের চিন্তার কারণ। প্রান্তিক খামারিদের সঠিক মূল্য নিশ্চিত করা এবং সিন্ডিকেট ভাঙা গেলে বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে ও ভোক্তারা সাশ্রয়ী দামে মানসম্পন্ন পণ্য পাবেন। সরকারের উচিত সিন্ডিকেটের একচেটিয়া শক্তিকে ভেঙে বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা,যাতে পোল্ট্রি শিল্পের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায়। এ পদক্ষেপগুলো খামারি ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থ রক্ষায় সাহায্য করবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...