ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪

দেশের প্রায় ৮৩.৬% মানুষ প্রতিনিয়ত একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করেন। শহরে পানির বোতল এবং গ্রামে কোমল পানীয়ের বোতল বেশি ব্যবহৃত হয়।

ভোক্তাদের মধ্যে শহরে মাত্র ১৮.৪% এবং গ্রামে মাত্র ৫.৫% মানুষ এই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন।

গতকাল মঙ্গলবার এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো “একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলের পরিবেশগত প্রভাব: দূষণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি” শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলের ভয়াবহ পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির বাস্তবচিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৩.১৫ থেকে ৩.৮৪ বিলিয়ন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে মাত্র ২১.৪% রিসাইকেল করা হয়। বাকি ৭৮.৬% প্লাস্টিক বোতল নদী, সমুদ্র এবং ডাম্পিং স্টেশনে জমা হয়। এই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল ৪৫০ বছর পর্যন্ত পরিবেশে টিকে থাকে, যা পরবর্তিতে পরিবেশ ও আমাদের খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে মাইক্রোপ্লাস্টিক ও বিষাক্ত রাসায়নিক ছড়ায়।

সাবেক সচিব এবং এসডো’র চেয়ারপার্সন, সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ প্লাস্টিক বোতলের প্রভাব, পরিবেশ দূষণ ও আমাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “প্লাস্টিক দূষণ, বিশেষ করে একবার ব্যবহারযোগ্য বোতল থেকে সৃষ্ট দূষণ আমাদের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক চ্যালেঞ্জ। প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাস, পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যবস্থা উন্নত করা এবং আমাদের প্রতিবেশতন্ত্র রক্ষার জন্য সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং এসডো’র সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার, প্রফেসর ড. মো. আবুল হাশেম প্লাস্টিক এর ক্ষতিকর প্রভাবের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলের পরিবেশগত এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি উপেক্ষা করা যায় না। বিসফেনল এ এবং মাইক্রোপ্লাস্টিকের মতো রাসায়নিক আমাদের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করছে, যা মানবস্বাস্থ্য এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।”

গবেষণায় আরও দেখা গেছে,  প্রায় ৫১% শহরের ভোক্তা এবং ৪২% গ্রামীণ ভোক্তা এই প্লাস্টিক বোতলগুলো মাত্র একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেয়। এবং বাকি অধিকাংশ ভোক্তা একাধিকবার ব্যবহারের পর তা ফেলে দেয়।

প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী বর্জ্য সংগ্রহকারীদের মধ্যে মাত্র ৩.৪% একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলের পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে সচেতন।

একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল থেকে নির্গত রাসায়নিক, যেমন বিসফেনল এ, গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেমন, শরীরের হরমোন সিস্টেমে বিঘ্ন এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে শুরু করে ক্যান্সারের সম্ভাবনা তৈরি করে।

এসডো’র মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এই সংকট মোকাবিলায় নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে সহযোগিতা প্রয়োজন, যাতে টেকসই বিকল্প এবং দায়িত্বশীল ভোক্তা আচরণকে উৎসাহিত করা যায়।”

এসডো’র নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বলেন, “একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলের সংকট মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আমরা প্রতিটি স্তরে পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহিত করতে চাই, যাতে পরিবেশবান্ধব সমাধান গ্রহণ, বর্জ্য সংগ্রহকারীদের সহায়তা এবং পরিবেশ ও স্বাস্থ্য রক্ষায় কঠোর নীতি প্রয়োগ করা যায়।”

একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলের প্রভাব হ্রাসের জন্য প্রতিবেদনে উপস্থাপিত সুপারিশগুলো হলো পরিবেশবান্ধব, টেকসই এবং সাশ্রয়ী বিকল্প ব্যবহার করা। পুনর্ব্যবহারযোগ্য বোতলেরর ব্যবহারকে উৎসাহিত করা। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকবোতলের উৎপাদন ও ব্যবহার কমানো। একটি পূর্ণাঙ্গ নীতি ও নিয়ন্ত্রক নির্দেশিকা প্রণয়ন করা। বিকল্প সমাধান প্রচার করা এবং উৎপাদন করা। পরিবেশ সম্মত রিসাইকেল নিশ্চিত করা। ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান পুনর্ব্যবহার এবং বিপজ্জনক প্লাস্টিক বর্জ্য বাণিজ্য নিষিদ্ধ করা

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...