নভেম্বর ২১, ২০২৪

ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানি পাওয়ার বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনার পর তাদের পাওনা পরিশোধ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ। আদানি পাওয়ারের কাছে বাংলাদেশের মোট ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে বলে জানা গেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানির বকেয়া তা দ্রুত পরিশোধ করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ। বিষয়টির সুরাহা করতে আদানি ৭ নভেম্বরের যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে, তার আগেই বাংলাদেশ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন দুজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা।

দুইজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, ইতিমধ্যেই আদানি পাওয়ারকে আংশিক পেমেন্ট করা শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ সরবরাহ করে আদানি।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা পেমেন্ট সমস্যার সমাধান করেছি। ইতিমধ্যে আদানি গ্রুপের অনুকূলে ১৭০ মিলিয়ন ডলারের লেটার অভ ক্রেডিট (এলসি বা ঋণপত্র) ইস্যু করেছি।’

ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত আদানির ১,৬০০ মেগাওয়াট গোড্ডা কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ সংকটে ভুগতে থাকা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমানোর বিষয়ে বিবিসির প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি আদানি পাওয়ার।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, এমন তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি করতে সমস্যায় পড়েছে আদানি পাওয়ার। তাই বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য ৭ নভেম্বরের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানান, ৭ নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে আদানি। তবে বিপিডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি আসবে বলে আমরা মনে করি না।’

কর্মকর্তারা বলেন, তারা ধীরে ধীরে এবং নিয়মিত পাওনা পরিশোধ করবেন। বকেয়া পাওনা পরিশোধের এই সমস্যার সমাধানে তারা আত্মবিশ্বাসী।

বিপিডিবির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, আদানি আগে বাংলাদেশে ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও চলতি মাসে তা ৭০০-৮০০ মেগাওয়াটে নামিয়ে এনেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, পেমেন্ট বাড়ানোর পরও সরবরাহ কমানো হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি। আমরা পাওনা পরিশোধ করতে প্রস্তুত এবং বিকল্প ব্যবস্থা নেব, কিন্তু কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীকে আমাদের জিম্মি করে ব্ল্যাকমেইল করার সুযোগ দেব না।

তিনি জানান, আদানিকে বাংলাদেশ জুলাই মাসে ৩৫ মিলিয়ন ডলার, সেপ্টেম্বরে ৬৮ মিলিয়ন ডলার ও অক্টোবরে ৯৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। বিদ্যুৎ সংকট তীব্র হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের মানুষ ইতিমধ্যে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

বিদ্যুৎ, কয়লা ও তেল আমদানির জন্য ডলারের সংস্থান করতে সমস্যায় পড়ছে বাংলাদেশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আগস্টে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে আগের ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজের বাইরে আরও ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে।

আদানি পাওয়ারের সঙ্গে ২০১৫ সালে করা বিদ্যুৎ চুক্তিটি শেখ হাসিনার আমলে স্বাক্ষরিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার চুক্তিটিকে অস্বচ্ছ বলে উল্লেখ করেছে। একটি জাতীয় কমিটি আদানিসহ মোট ১১টি চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন করছে। উল্লেখ্য, আদানি বাংলাদেশের কাছ থেকে বিদ্যুতের দাম ভারতের অন্য বেসরকারি উৎপাদনকারীদের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি রাখছে।

আদানি পাওয়ারের পাশাপাশি এনটিপিসি লিমিটেড ও পিটিসি ইন্ডিয়া লিমিটেডসহ ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। বিপিডিবির কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, অন্যান্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের পাওনাও আংশিকভাবে পরিশোধ করা হচ্ছে।

বিদ্যুতের সরবরাহ সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ কয়েকটি গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ফের চালু করছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে বিদ্যুতের খরচ আরও বাড়বে। শীতের মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ৫০ শতাংশ সক্ষমতায় চলছে। ডলার সংকটে পর্যাপ্ত কয়লা কেনা যাচ্ছে না। তাই আদানির রেডিমেড বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় উৎপাদনকারীদের চেয়ে তাদের বিদ্যুৎ বেশি ব্যয়বহুল হলেও এই সরবরাহটা জরুরি।’

ডিসেম্বরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। রাশিয়ার সহায়তায় নির্মিত এই প্রকল্পে খরচ হয়েছে ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার। দীর্ঘমেয়াদি রুশ ঋণে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে প্রকল্পটি। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...