অক্টোবর ১৬, ২০২৪

মা ইলিশ রক্ষায় বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনা করে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাকে ভিত্তি ধরে ২২ দিন পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধ শুরু হচ্ছে রোববার (১৩ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে। এ নিষেধাজ্ঞা চলবে ৩ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত।

এ সময় দেশব্যাপী ইলিশ পরিবহণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকবে এবং একই সঙ্গে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রতি বছর এই সময়ে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার লক্ষে সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পদ্মা-মেঘনা নদীতে ছুটে আসে। এই সময়কে বিবেচনা করে এ বছরও ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

চাঁদপুরের মেঘনা নদীর ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকায় নিষেধাজ্ঞার সময়ে কোনো জেলে নদীতে নামতে পারবে না। নিষেধাজ্ঞার সময়ে ইলিশ মাছ আহরণ ও বিক্রি করলে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানাসহ উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী।

এদিকে পদ্মা-মেঘনা পাড়ের অর্ধলক্ষাধিক জেলে জাল-নৌকা তীরে উঠিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিষেধাজ্ঞাকালীন পরিবার-পরিজনের ভরন-পোষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন জেলেরা। তাই সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তারও দাবি জানান তাঁরা।

চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিনাঘাট মেঘনা পাড়ের জেলে বাবুল ও লোকমান হোসেন বলেন, আমরা সরকারের নিষেধাজ্ঞা মানি। কিছু কিছু জেলে মানে না। ২২ দিন মাছ ধরতে পারব না কিন্তু পরিবার নিয়ে কীভাবে দিন কাটে, সেই খবর কেউ রাখে না। আমাদের যে চাল দেয়, তা দিয়ে কিছুই হয় না। চালের সঙ্গে আনুষঙ্গিক জিনিস লাগে, সেই খরচ কীভাবে পাব।

জেলেরা আরও বলেন, ধারদেনা ও কিস্তির টাকা দিয়ে আমাদের চলতে হয়। ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারি না। আমাদের দুশ্চিন্তার কথা কেউ ভাবে না। যার কারণে অনেক জেলে বাধ্য হয়েই নদীতে নামে। আমরা সরকারি চাল চাই না। আমাদের এককালীন টাকা দিলে পোষাতে পারব।

চাঁদপুর নদীকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবু কাউছার দিদার বলেন, বিগত বছরের মতো এবারও ডিম ছাড়াল অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। আশা করছি বিগত বছরের ৫২.৪% স্পেন রেট ছিল, তা এই বছরেরও সমসাময়িক কিংবা বেশি হতে পারে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা আশানুরূপ ইলিশ পায়নি। আশা করছি ২২ দিন বন্ধের পর পরই বিগত বছরের মতো জেলেরা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাবেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে পালিত হবে। নিষেধাজ্ঞাকালীন কোনো জেলে নদীতে নামলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো জেলে যাতে নদীতে নামতে না পারে এবং ইলিশ আহরণ করতে না পারে সে জন্য আমরা কোস্ট গার্ড ও নৌপুলিশে অতিরিক্ত সদস্য রাখব। এ ছাড়া এবার সেনাবাহিনীকে বলা হয়েছে, যাতে নদীর তীরবর্তী এলাকায় মনিটরিং করে। পাশাপাশি এবার রোবার স্কাউটকে এই কাজে যুক্ত করা হবে।

জেলা প্রমাসক আরও বলেন, জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে যে চাল দেওয়া হয় এর বাইরে কোনো আর্থিক সহায়তার সুযোগ নেই। আমরা শুধু চালই বরাদ্দ পেয়েছি। জেলেরা যে আর্থিক সহায়তার দাবি করছে, আমরা ভবিষ্যতে এই বিষয় নিয়ে কথা বলব, যাতে তাদের জন্য কিছু করতে পারি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *