নভেম্বর ২৪, ২০২৪

দেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পাঁচ সদস্যের ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং টেকসই পুঁজিবাজার গঠনে কাজ করবে এ টাস্কফোর্স।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামত বিবেচনা করে যথাসময়ে প্রতিবেদন (বিদ্যমান কাঠামো পর্যালোচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় সংশোধনী প্রস্তাব, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের নিমিত্তে সুপারিশ প্রদানসহ অন্যান্য বিষয়) বিএসইসির কাছে হস্তান্তর করবে। বিশেষ করে, পুঁজিবাজারে সুশাসন ও আস্থা ফেরাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রধান প্রধান দিকগুলো বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় সংস্কার পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের সুপারিশ প্রণয়ন করবে টাস্কফোর্স।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পিএলসি’র সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান বলেছেন, আমি আশা করি, এ কাজে আমাদের চেষ্টার কমতি থাকবে না। আমরা ভালো কিছু করা চেষ্টা করব। যাতে করে আমাদের দেশে ভালো মানের একটি পুঁজিবাজার গড়ে উঠতে পারে। এখানে অনেক কিছু করার আছে। বিশেষ করে, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক স্থান হিসেবে পুঁজিবাজারকে গড়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে বাজারে সুশাসন ও আস্থার জায়গাটা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবো। পুঁজিবাজারে আস্থা একটি বড় বিষয়। এটি একটি ছোট শব্দ মনে হলেও পুঁজিবাজারে এর গুরুত্ব কিন্তু অনেক বড়। আস্থার জায়গা নিশ্চিত করতে অনেক কিছু করতে হবে। তবে, পুঁজিবাজার সংস্কারের এ কাজে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমাদেরকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে অনেক কিছু করতে হবে। এ কাজে গণমাধ্যমকেও অবদান রাখতে হবে। আমরা সেভাবেই চিন্তা করছি। সবার পরামর্শে আমরা কাজ করব।

হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং-এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন বলেন, এখনও আমরা কাজ শুরু করিনি। সোমবার আদেশটি পেয়েছি। আমরা শিগগিরই কাজ শুরু করব। আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে বুঝতে পারি যে, পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট আছে। একই সঙ্গে গভর্নেন্স ও ট্রান্সপারেন্সির অভার আছে। এ সংকটগুলোকে আমরা সাধ্যমতো নিরসন করার চেষ্টা করব। পুঁজিবাজার কিন্তু বিরাট স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে পরিচালিত। প্রত্যেক স্টেকহোল্ডারের কাজের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা ও সংকট রাতারাতি সমাধান করা হয়ত সম্ভব হবে না। তবে, আমরা যত দ্রুত সম্ভব তা সমাধানের চেষ্টা করব।

তিনি আরো বলেন, আমরা দেখছি, পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি আসছে না, বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না, বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না। এসব না হওয়ার তো কিছু কারণ আছে। আমরা সেটাই খুঁজে বের করব। পুঁজিবাজারে যারা বিনিয়োগ করেন, তারা সবাই ডিভিডেন্ড ও ক্যাপিটাল রিটার্ন চান। আমরা চেষ্টা করব, বিনিয়োগকারীরা সেটা যেন পেতে পারেন। আর সেটা নিশ্চিত করতে সবার আগে পুঁজিবাজারে গভর্নেন্স ফিরিয়ে আনতে হবে। গভর্নেন্স ফিরে আসলে আশা করি, বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারের ওপর আস্থা ফিরবে। এজন্য আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, সোমবার পাঁচ সদস্যের টাক্সফোর্স গঠন করা হয়েছে। এখন আমরা পাঁচজন সদস্য একসঙ্গে বসে কথা বলব। টাস্কফোর্সের কার্যপরিধিতে আমাদের কার্যক্রমের বিষয়ে সবকিছু উল্লেখ আছে। এগুলো যদি সঠিকভাবে পরিপালন করতে পারি, তাহলে আশা করা যায়, বিনিয়োগকারীরা সেই সুফল ভোগ করতে পারবেন। আমরা চেষ্টা করব আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করতে, যাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি। পাশাপাশি, বিএসইসি থেকে আমাদেরকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা যথাযথভাবে পালন করা চেষ্টা করব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন বলেন, দেখা যাক, আমরা কতদূর কাজ করতে পারি। তবে, আমারা ভালো কিছু করার চেষ্টা করব।

এই ক্রান্তিকালে পুঁজিবাজার সংস্কার চ্যালেঞ্জ মনে করছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য চ্যালেঞ্জ শুধু এই ক্রান্তিকাল নয়, অনেকদিন ধরেই ছিল। এটা নতুন কিছু না। এই ক্রান্তিকালের আগেও পুঁজিবাজার ভালো ছিল না। তবে, এটাকে আমরা একটি ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি অনুযায়ী কাজ করব। আমরা সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ ভালো কিছু করার চেষ্টা করব, যাতে এর সুফল পাওয়া যায়। একটি দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজার যেন ভালো অবস্থানে থাকে, সেটার জন্য যা যা করণীয়, আমরা তা করব।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর বলেন, এখনও আমরা কাজ শুরু করিনি। আমরা কাজ শুরু করার পর আপনাদেরকে বিস্তারিত জানাতে পারব। আশা করি, আমরা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো কিছু করতে পারব।

প্রসঙ্গত, সোমবার (৭ অক্টোবর) বিএসইসি’র চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়েছে। বিএসইসি গঠিত এ টাস্কফোর্সের ১৮টি কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...