বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি। এরপর থেকেই সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছে না ছোটপর্দার অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতির। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সময় ‘আলো আসবেই’ নামক আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিল্পীদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সক্রিয় থাকায় বিতর্কের মুখে পড়েন তিনি।
এর পরপরই শিল্পকলা একাডেমি থেকে চাকরি হারান জ্যোতি। ব্যক্তিগত জীবনে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সরব থাকায় সরকার পতনের পর নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন এ অভিনেত্রী। বিষয়গুলো নিয়ে সম্প্রতি একটি ফেসবুকে লাইভে হাজির হন জ্যোতি।
যেখানে শুরুতেই ‘আলো আসবেই’ গ্রুপ প্রসঙ্গে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন এ অভিনেত্রী। জ্যোতিকা জ্যোতি বলেন, এতদিন কথা বলিনি। কিন্তু আর চুপ থাকতে পারলাম না। কারণ, আমিসহ ওই গ্রুপের সবাইকে সামাজিক কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনই করতে পারছি না। বলতে পারেন সামাজিক হেনস্তার শিকার হচ্ছি। তিনি বলেন, তাই একজন সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে আমি আমার বিষয়টি পরিষ্কার করতে ফেসবুক লাইভে এসেছি।
জ্যোতি বলেন, যারা ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে ছিলেন, তাদের দুটি তকমা দেওয়া হচ্ছে। একটি হলো— স্বৈরাচারের দোসর, আরেকটি হলো— গণহত্যার ইন্ধনদাতা! এ দুটি কথার মানে কি আপনারা জানেন? আমরা কি করেছি যে, এ ধরনের কথা শুনতে হবে?
জ্যোতি বলেন, আমি আজ থেকে আরেকটি বারের জন্যও এ অপবাদ নিজের কাঁধে নিতে চাই না বলেই কথাগুলো বলতে এসেছি। এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম তার কোনো প্রমাণ আপনাদের কাছে আছে? না থাকলে এসব কথা কেন বলছেন? আপনারা কি জানেন, এ ধরনের অপবাদ মানুষের ওপর কি ধরনের প্রভাব ফেলে? আমি তার সহ্য করতে না পেরে আজ কথাগুলো বলছি।
জ্যোতি আরও বলেন, একে তো আমি নারী, আজকাল দেশে নারীদের কোনো সম্মান নেই। তার ওপর আমি অভিনেত্রী, তাতে তো আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলা আরও সহজ! সেই সাথে আমি হিন্দু, আমি অন্যায় দেখলে মুখ বন্ধ রাখি না— এই সবকিছুতেই তো আপনাদের সমস্যা। এ জন্য এমনিতেই নানা ধরনের চাপের মধ্যে আছি। কিন্তু যে কাজের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততাই নেই তার জন্য দয়া করে আমাকে অপবাদ দিয়ে মানসিক চাপ সৃষ্টি করবেন না। এটুকু অনুরোধ থাকলো সবার প্রতি।’
ওই গ্রুপে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করা শিল্পীরাই ছিলেন— জানিয়ে অভিনেত্রী বলেন, যেসব শিল্পী আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন, তারাই ওখানে ছিলেন। ইনিয়ে-বিনিয়ে বলব না যে, আমাকে কেন অ্যাড করেছে, কে অ্যাড করেছে জানি না। সবকিছু জেনেশুনেই ছিলাম। কারণ আমি জানতাম, ওই গ্রুপের এমন কোনো উদ্দেশ্য নেই, যা আমাদের দেশের বা দেশের মানুষের জন্য ক্ষতিকর। দু-একটা কথা হয়তো আপনারা ক্ষতিকর মনে করছেন। কিন্তু সেই কথাগুলো কোন পরিস্থিতিতে বলা হয়েছে, সেটা আপনারা জানেন না। কোনো শিল্পী কখনই মানুষ হত্যার সমর্থন করতে পারে না, এটা আপনারা ভুলে গেছেন।
আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপাতালে গেছেন উল্লেখ করে জ্যোতি বলেন, ‘আমি সেই সময় দুটি প্রোগ্রামে গেছি। একটি বিটিভিতে হামলার প্রতিবাদ করতে, অন্যটি আন্দোলনে যে ছাত্ররা আহত হয়েছেন, তাদের হাসপাতালে দেখতে। কিন্তু আপনারা ছাত্রদের দেখতে যাওয়ার বিষয়টি কেউ সামনে আনলেন না, আনলেন বিটিভির বিষয়টি। আমরা তো সেখানে গিয়েছিলাম সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে। এটা তো দোষের কিছু নয়। আমরা সবসময় বলে এসেছি যে, এই ধরনের ধংসযজ্ঞ ছাত্ররা করতে পারে না। ছাত্রদের মধ্যে একদল সুবিধাবাদী ঢুকে গিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করেছে। তাহলে আপনারা কেন আলো আসবেই গ্রুপের শিল্পীদের ছাত্রদের বিরুদ্ধে দাঁড় করাচ্ছেন? অহেতুক আপনারা এই গ্রুপটিকে নিয়ে নানা রঙচঙ মাখিয়ে শিল্পীগুলোকে ক্ষতির মুখে ফেলেছেন।’
প্রসঙ্গত, জ্যোতিকা জ্যোতি ছাড়াও সেই গ্রুপে ছিলেন অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা ও সাংবাদিক। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন— রোকেয়া প্রাচী, সোহানা সাবা, অরুণা বিশ্বাস, ফেরদৌস, রিয়াজ আহমেদ, সুবর্ণা মুস্তাফা, আজিজুল হাকিম, স্বাগতা, বদরুল আনাম সৌদ, শমী কায়সার, তানভীন সুইটি, আশনা হাবীব ভাবনা, জামশেদ শামীম, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, সাজু খাদেম, হৃদি হক, দীপান্বিতা মার্টিন, সাইমন সাদিক, জায়েদ খান, লিয়াকত আলী লাকী, নূনা আফরোজ, রোকেয়া প্রাচী, রওনক হাসান, আহসানুল হক মিনু, পরিচালক গুলজার, নির্মাতা এস এ হক অলীকসহ অনেকে।