নভেম্বর ২৪, ২০২৪

সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছিলেন, পূর্ব লাদাখের চার হাজার বর্গকিলোমিটার জমি চীন দখল করে রেখেছে। যতটা জমি তারা দখল করেছে, তা প্রায় দিল্লির আয়তনের সমান।

সেই অভিযোগের সরাসরি কোনো জবাব না দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, উত্তেজনা কমাতে চীন-ভারত সীমান্তে দুই দেশের সেনা অপসারণের ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে ‘ফরোয়ার্ড’ এলাকা থেকে সেনা সরানোর চেয়েও বড় বিষয় হলো সীমান্তে দুই বাহিনী সাজো সাজো অবস্থান। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র জড়ো হচ্ছে।

রাহুল ওই মন্তব্য করেছিলেন গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসির জাতীয় প্রেসক্লাবে, জয়শঙ্কর সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন গতকাল বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর সিকিউরিটি পলিসি’র সভায়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চীন নীতির সমালোচনা করে রাহুল বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদির দাবি তিনি সীমান্ত সমস্যার খুব ভালো মোকাবিলা করেছেন। আমার প্রশ্ন, যুক্তরাষ্ট্রের চার হাজার বর্গকিলোমিটার জমি কোনো প্রতিবেশী দখল করে রাখলে কোনো প্রেসিডেন্ট কি পার পেতেন? ভালোভাবে মোকাবিলা করার দাবি করতে পারতেন? কেউ কি তা গ্রাহ্য করত? প্রধানমন্ত্রী মোদি মোটেই মোকাবিলা করতে পারেননি। লাদাখে যা হয়েছে, তা বিপর্যয়।’

চার বছর আগে ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের গলওয়ানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) ভারত ও চীনের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দুই পক্ষেই সেনাদের মৃত্যু হয়। আহতও হন অনেকে। সেই থেকে এলএসির স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চীনকে ভারত ক্রমাগত চাপ দিয়ে চলেছে। কিন্তু আজও তা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। যদিও এই প্রথম জয়শঙ্কর জানালেন কত শতাংশ সমস্যা সমাধান হয়েছে।

রাহুলের অভিযোগ ও জয়শঙ্করের দাবির মধ্যেই রাশিয়ায় গেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। সেখানে সেন্ট পিটার্সবার্গে ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশের নিরাপত্তাকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের অবসরে দোভাল দেখা করেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য ও পররাষ্ট্রসংক্রান্ত কমিশনের অধিকর্তা ওয়াং ইর সঙ্গে। ওই বৈঠকের পর গত বৃহস্পতিবার ভারতের পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, যেসব জায়গা থেকে এখনো সেনা সরানো হয়নি, সেখানে জরুরি ভিত্তিতে তা করতে দুই দেশ রাজি হয়েছে। সেই কাজ দুই দেশই দ্বিগুণ বেগে করবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দোভাল ওই বৈঠকে চীনা কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, দুই দেশের স্বার্থেই সীমান্ত অঞ্চল স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ থাকা জরুরি। পাশাপাশি উচিত, দুই দেশের মধ্যে যেসব চুক্তি ও বোঝাপড়া রয়েছে, সেগুলো মেনে চলা। এটা শুধু দুই দেশের জন্য নয়, এই অঞ্চল ও গোটা পৃথিবীর জন্য জরুরি।

ভারত-চীন সংঘর্ষের পর লাদাখ পরিস্থিতি কেমন, তা দেখার কোনো অনুমতি সরকার কাউকে দেয়নি। ভারতীয় সংসদের প্রতিরক্ষাবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। এমনকি চীন-ভারত সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে কোনো আলোচনাও এই চার বছরে করতে দেওয়া হয়নি। কংগ্রেসসহ বিরোধীরা বারবার জানতে চেয়েছেন, এলএসির স্থিতাবস্থা নিয়ে চীনের সঙ্গে এত আলোচনার প্রয়োজন কোথায়, যখন প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন ভারতের এক ইঞ্চি জমিও চীনা ফৌজ দখল করেনি? সরকারের পক্ষ থেকে এর কোনো সদুত্তর আজও পাওয়া যায়নি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...