এই ম্যাচে টসে জিতে পাকিস্তানকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি স্বাগতিকদের। প্রায় এক বছর পর টেস্ট খেলতে নেমে তাসকিন আহমেদ বোলিং করতে এসে প্রথম ওভারেই আবদুল্লাহ শফিককে বোল্ড করেছেন। তার অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি শফিকের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে আঘাত করে স্টাম্পে। দলীয় শূন্য রানে প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান।
প্রথম ওভারে শফিকের বিদায়ের পর চাপ সামাল দেয়ার দেয়ার চেষ্টা করেন সাইম আইয়ুব ও শান মাসুদ। দুই বাঁহাতি ব্যাটার পুরো সেশনেই আর উইকেট হারাতে দেননি পাকিস্তানকে। তাসকিনের সঙ্গে হাসান মাহমুদও বেশ আগ্রাসী বোলিং করেন, লাভ হয়নি তাতে।
তরুণ পেসার নাহিদ রানাও চেষ্টা করে গেছেন। এ দিন তার ওপর একটু চড়াও ছিলেন পাকিস্তানের ব্যাটাররা। জুটি ভাঙার আশায় মিরাজকেও আক্রমণে আনেন বাংলাদেশের অধিনায়ক, সুবিধা করতে পারেননি তিনিও।
প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসেই ব্যর্থ হওয়া মাসুদ এবার দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। মাত্র ৫৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন পাকিস্তানের এই অধিনায়ক। ৩৫ ম্যাচে এটি তার দশম হাফ সেঞ্চুরি। আরেক অপরাজিত ব্যাটার সাইম আইয়ুবও আফ সেঞ্চুরির কাছে থেকে মধ্যাহ্নভোজ বিরতিতে যান। মধ্যাহ্নভোজ বিরতির পর তৃতীয় ওভারেই উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। শান মাসুদকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন মিরাজ। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি পাকিস্তানের। ১০৭ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটির সমাপ্তি ঘটে। ৬৯ বলে ৫৭ রান করে ফিরে যান পাকিস্তানের দলপতি।
খানিক বিরতির পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়া সাইম আইয়ুবকেও নিজের শিকার বানিয়েছেন মিরাজ। মিরাজের বলে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন সাইম। তবে বলের লাইন মিস করেন তিনি। বল হাতে নিয়েই স্টাম্প ভেঙে দেন লিটন। ফলে ১১০ বলে ৫৮ রান করেই ফিরে যেতে হয় সাইমকে। এর মধ্যে দিয়ে ১২২ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়েছে পাকিস্তান।
অবশ্য নাহিদের আগের ওভারেই সাইমকে আউট করার সম্ভাবনা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। এই পেসারের লেংথ ডেলিভারি সাইমের ব্যাটের পাশ দিয়ে গিয়ে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে। যদিও সাইমের ব্যাটে বল লেগেছে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। তবে শেষ মুহূর্তে রিভিউ নেন অধিনায়ক শান্ত। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল ব্যাটের পাশ দিয়ে গেলেও ব্যাট ছোঁয়ায়নি বল। ফলে বেঁচে যান ওপেনার সাইম।
নিজের ১১তম ওভারে এসে সাউদ শাকিলের তোপের মুখে পড়েছিলেন তাসকিন। ওভারের প্রথম দুই বলেই শাকিল হাঁকিয়েছিলেন দুটি চার। প্রথমটি পয়েন্ট ও গালির মাঝ দিয়ে। আর পরেরটি পয়েন্ট আর কাভারের মাঝামাঝি দিয়ে। যদিও ওভারের শেষ বলেই শাকিলকে তুলে নেন তাসকিন।
এই পেসারের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে থার্ড ম্যানে ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন শাকিল। তবে লাফিয়ে ওঠা বল ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে স্টাম্পে চলে যায় ফলে ২৮ বলে ১৬ রান করে ফিরে যেতে হয় শাকিলকে। এরপর বাবর আজমকে থিতু হতে দেননি সাকিব আল হাসান। এই টাইগার বাঁহাতি স্পিনারের আর্ম বলে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন তিনি।
দ্বিতীয় সেশনে ৩০ ওভারে ৮৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছে পাকিস্তান। তার ৫ উইকেটে ১৮৩ রান নিয়ে চার বিরতিতে যায়। পাকিস্তানের আশার আলো হয়ে এখনও টিকে আছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সালমান আঘা। শেষ সেশনে বাংলাদেশকে ব্যাক থ্রু এনে দিয়েছেন নাহিদ। তিনি মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ফিরিয়েছেন। নাহিদের লাফিয়ে ওঠা বলে খোঁচা দিয়ে প্রথম স্লিপে বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন। রিজওয়ানের ইনিংস থেমেছে ৬৩ বলে ২৯ রানে। এর মধ্যে দিয়ে আঘা সালমানের সঙ্গে তার ৩২ রানের জুটি ভাঙে।
প্রসিদ্ধ ব্যাটাররা ফিরে গেলেও বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছিলেন দুই লোয়ার অর্ডার ব্যাটার আঘা সালমান ও খুররম শাহজাদ। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার জীবন পেলেও শেষ পর্যন্ত তাকে আউট করেছেন মিরাজ। এই ডানহাতি স্পিনারের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে সাকিব আল হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি মিড অফে। এরপর মোহাম্মদ আলীকেও থিতু হতে দেননি মিরাজ। তাকে স্লিপে শান্তর হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন তিনি। একপ্রান্ত আগলে রেখে ৯২ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন আঘা সালমান। তাসকিনের বাউন্স বলে পুল করে ছক্কা মেরে হাফ সেঞ্চুরিতে পৌঁছান এই পাকিস্তানি ব্যাটার। ওভারের শেষ বলে সালমান একইভাবে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ডিপ ফাইন লেগে সাকিবের হাতে ক্যাচ দেন ৫৪ রান করা সালমান। পরের ওভারের প্রথম বলেই আবরার আহমেদকে বোল্ড করে পাকিস্তানের ইনিংস গুঁটিয়ে দিয়েছেন মিরাজ। আর তাতেই প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েছেন ডানহাতি এই স্পিনার।