ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা ৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিরলস এই আগ্রাসনে গাজা ভূখণ্ড পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে।
পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ যে, গাজায় যে মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, তাতে ধ্বংসস্তুপ পরিষ্কারে সময় লাগতে পারে ১৫ বছর। এমনটিই জানিয়েছে ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণে গাজা উপত্যকায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে ১৫ বছর সময় লাগবে বলে ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজিস (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) একটি মূল্যায়নের বরাত দিয়ে সোমবার সংস্থাটি বলেছে, অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটির পরিচ্ছন্নতার জন্য ৪০ মিলিয়ন টন ধ্বংসস্তূপ অপসারণের প্রয়োজন হবে।
ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, বিভিন্ন অবকাঠামোর এসব ধ্বংসাবশেষ ও ধ্বংসস্তুপ গাজা উপত্যকার মানুষের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে, কারণ এতে অবিস্ফোরিত অস্ত্র এবং ক্ষতিকারক বিভিন্ন পদার্থ থাকতে পারে।’
সংস্থাটি বলেছে, ধ্বংসস্তুপ অপসারণের জন্য ১০০টিরও বেশি ট্রাকের প্রয়োজন হবে এবং ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি খরচ হবে।
অন্যদিকে ইউএনইপি বলেছে, গাজার কিছু ধ্বংসাবশেষ অ্যাসবেস্টস দ্বারা দূষিত। বিষাক্ত এই খনিজ ক্যান্সারসহ ফুসফুসের রোগ সৃষ্টি করে। সংস্থাটি আরও বলেছে, গাজার ভবনগুলোর ধ্বংসাবশেষের নিচে বিপুল সংখ্যক মানুষের দেহাবশেষ চাপা পড়ে আছে।
এর আগে গাজায় ২০১৪ সালের ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের পর ভূখণ্ডটি থেকে প্রায় ২৪ লাখ টন ধ্বংসাবশেষ সরানো হয়েছিল। ইউএনইপি মনে করছে, এবার গাজা উপত্যকায় সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ ‘২০০৮ সাল থেকে গাজায় অন্যান্য সংঘাতের জেরে উৎপন্ন সমস্ত ধ্বংসাবশেষের সম্মিলিত যোগফলের চেয়ে ১৩ গুণ বেশি’।
টানা ৯ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের নিরলস আগ্রাসনের জেরে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের সংকটসহ গাজা ভূখণ্ডের বিস্তীর্ণ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গত মাসে সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসরায়েলের আর্মি রেডিও বলেছিল, গত মাসের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজায় প্রায় ৫০ হাজার বোমা ফেলেছে এবং এর মধ্যে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার বোমা বিস্ফোরিত হয়নি।
এছাড়া গত মে মাসে ইউএন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) জানিয়েছিল, গাজার বাড়িঘর পুনর্নির্মাণে ২০৪০ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ইউএনডিপির আরব রাষ্ট্রগুলোর আঞ্চলিক ব্যুরোর পরিচালক আবদুল্লাহ আল-দারদারি সে সময় বলেছিলেন, ‘আমাদের অনুমান অনুযায়ী, গাজার সামগ্রিক পুনর্গঠনের জন্য কমপক্ষে ৪০ বিলিয়ন থেকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে।’
আল-দারদারি আরও বলেন, ‘আমরা ১৯৪৫ সাল থেকে এরকম কিছু দেখিনি।’
সামগ্রিকভাবে, ফিলিস্তনের অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা এতোটাই প্রকট যে গাজায় মানব উন্নয়ন সূচক ৪০ বছর পিছিয়ে গেছে বলে ইউএনডিপি ধারণা করছে।
আল-দারদারি বলেছেন, ‘গাজায় গত ৪০ বছর ধরে মানব উন্নয়নে হওয়া সমস্ত বিনিয়োগ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আমরা প্রায় ৮০-এর দশকে ফিরে গেছি।’