নভেম্বর ২৬, ২০২৪

এই প্রথম কোনো সাংবিধানিক পদে পেলেন রাহুল গান্ধী। ইন্ডিয়ার শরিক দলগুলোও কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছে। গত ১০ বছর লোকসভায় কোনো বিরোধী নেতা ছিলেন না। কারণ, বিরোধী দলনেতার পদ পেতে গেলে লোকসভার মোট আসনসংখ্যার দশ শতাংশ বা ৫৪টি আসনে জিতে আসতে হতো। গত ১০ বছরে কোনো বিরোধী দলই এতগুলো আসন পায়নি। কংগ্রেস এবার ৯৯টি আসন পেয়েছে। ফলে তারা এবার বিরোধী নেতার পদ পেল।

কংগ্রেস সংসদীয় দলের চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী প্রোটেম স্পিকার ভর্তৃহরি মহাতবকে চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেস রাহুল গান্ধীকেই বিরোধী নেতার পদের জন্য মনোনীত করেছে। ইন্ডিয়ার শরিক দলগুলোও কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে। ২০০৪ সালে আমেঠি থেকে জিতে লোকসভায় প্রবেশ করেছিলেন রাহুল গান্ধী। তারপর দশ বছর কেন্দ্রে ইউপিএ-র সরকার ছিল। সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং অনেকবার রাহুলকে মন্ত্রী হওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি।

২০১৭ সালে রাহুল কংগ্রেস সভাপতি হন। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের আবার ভরাডুবি হওয়ায় রাহুল ইস্তফা দেন। তারপর তিনি আর দলের দায়িত্ব নেননি। লোকসভায় কংগ্রেসের নেতার দায়িত্বও নেননি। কিন্তু এবার কংগ্রেসের ফল ভালো হওয়ায়, তাদের শক্তি অনেকটা বেড়ে যাওয়ার পর রাহুল বিরোধী নেতার পদ নিতে রাজি হয়েছেন। ফলে এই প্রথমবার তিনি কোনো সাংবিধানিক পদে গেলেন।

শুধু তাই নয়, এই প্রথমবার লোকসভায় তিনি সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেবেন। লোকসভায় সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টা থেকে শুরু করে ইন্ডিয়ার শরিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে এক হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানোর কাজটা তাকেই করতে হবে। স্পিকার পদে কংগ্রেসের প্রার্থী স্পিকারের পদ নিয়ে এবার ভোটাভুটি হবে। স্পিকারের পদে এনডিএ-র প্রার্থী হলেন গতবারের স্পিকার ওম বিড়লা।

কংগ্রেসসহ বিরোধীদের দাবি ছিল, রীতি মেনে ডেপুটি স্পিকারের পদ বিরোধীদের দিতে হবে। কিন্তু সরকার তাতে রাজি হয়নি বলে দাবি করেছেন বিরোধীরা।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি বিরোধীদের অনুরোধ করেছিলেন, ডেপুটি স্পিকারের বিষয়টি নিয়ে পরে ফয়সালা হবে। আগে স্পিকার পদে ওম বিড়লাকে সমর্থন করুক বিরোধীরা। এরপর কংগ্রেস আটবারের সাংসদ সুরেশকে স্পিকার পদে প্রার্থী করেছে। সুরেশ এই লোকসভায় সবচেয়ে বেশিবার জিতে আসা সাংসদ। কংগ্রেসের দাবি ছিল, তাকেই প্রোটেম স্পিকার করতে হবে। কিন্তু সেই দাবি মানা হয়নি। প্রোটেম স্পিকার হয়েছেন ভর্তৃহরি মহাতব।

কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, সরকার ডেপুটি স্পিকারের পদ নিয়ে অনড় মনোভাব দেখানোর পর দলিত নেতা কে জি সুরেশকে প্রার্থী করা হয়। এর পিছনে একটা রাজনৈতিক বার্তা আছে। তৃণমূলের ক্ষোভ স্পিকার পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য নির্ধারিত সময়সীমার সামান্য আগে কংগ্রেস একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে জানায়, স্পিকারের পদের জন্য সুরেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

এরপর তৃণমূল জানিয়েছিল, কংগ্রেস এইভাবে একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ইন্ডিয়া শরিকদের সঙ্গে কেন আলোচনা করা হলো না, সেই প্রশ্নও তোলে তারা। রাতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাড়িতে ইন্ডিয়ার শরিক দলগুলির নেতাদের বৈঠক হয়। সেখানে তৃণমূলের দুই নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডেরেক ও ব্রায়েন গেছিলেন।

ওই বৈঠকে ঠিক হয়, ইন্ডিয়ার সব শরিক দল সুরেশকে সমর্থন করবে। তবে কংগ্রেস নেতৃত্বকে তৃণমূল জানিয়ে দিয়েছে, তারা যেন একতরফা সিদ্ধান্ত না নেন। তবে স্পিকার পদে লড়াই হলেও লোকসভায় এনডিএ-র সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। ফলে ওম বিড়লার দিকেই পাল্লা ভারী।

কংগ্রেস সূত্র জানিয়েছে, ভিপি নরসিমহা রাও, বাজপেয়ী, মনমোহনের আমলে বিরোধী দলের থেকেই ডেপুটি স্পিকার হয়েছেন। সেই রীতি মানা হচ্ছে না বলেই, তারা একজন প্রবীণ দলিত নেতাকে স্পিকারের পদে দাঁড় করিয়েছেন। সূত্র ডয়েচে ভেলে

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...