আম স্বাদে অনন্য, বিশেষ পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। কিন্তু সবাই সমপরিমান আম খেতে পারেন না। কারণ আমে চিনির পরিমাণ বেশি। তাই এটি খেলে মানুষের শরীরের স্যুগারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।
এই প্রতিবেদনে সেসব প্রশ্নের উত্তর জানিয়েছেন চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা।
পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম বলেন, পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, শর্করা, আমিষ, ভিটামিন এ, বিটা ক্যারটিন, পটাশিয়াম ইত্যাদি থাকে। তাই কাঁচা আমের তুলনায় আঁশযুক্ত পাকা আম শরীরের জন্য বেশি ভালো।
পুষ্টিবিদ তাসনিম বলেন, পাকা আমে পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশ জাতীয় উপাদান পেকটিন থাকে, যা খাদ্যকে ভালোভাবে পরিপাক হতে সাহায্য করে। এছাড়া আমের বিশেষ কিছু এনজাইম খাদ্য উপাদানের প্রোটিনকে ভালোভাবে ভেঙে ফেলতে কাজ করে। যা সামগ্রিকভাবে পরিপাক ক্রিয়ায় অবদান রাখে। আমে থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ও অন্যান্য ২৫ ধরনের ক্যারোটেনয়েডস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষ করে, আমে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে ও চোখের চারপাশের শুষ্কভাবও দূর করে। আমে প্রচুর বিচাক্যরটিন থাকায় এবং ভিটামিন এ, ই থাকায় স্কিন ভালো থাকে। ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে আম।
কৃষি তথ্য সার্ভিসের বর্ণনা অনুযায়ী, পাকা আমে যেহেতু কাঁচা আমের তুলনায় শর্করার পরিমাণ বেশি, তাই কাঁচা আম দেহের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। লিভারের সমস্যায় কাঁচা আম উপকারী। এটি বাইল এসিড নিঃসরণ বাড়ায়। অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে পরিষ্কার করে। দেহে নতুন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। এটি খসখসে চামড়া, চুলপড়া, হজমের সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
একজন মানুষ দিনে কতটুকু আম খেতে পারবেন তা নির্ভর করে তার শারীরিক পরিস্থিতি কেমন, তার উপর।
পুষ্টিবিদ তাসনিম বলেন, একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ অনায়াসেই দৈনিক দু’টো আম খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ফজলি আম খাওয়াটা বেশি ভালো। কারণ ফজলি আমে ভিটামিন এ, পটাশিয়াম, বিটা ক্যারোটিনের পরিমাণ অনেক।
তবে যারা কিডনি বা ডায়াবেটিসের রোগী, আম খাওয়ার ক্ষেত্রে তাদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি জানান, কিডনি রোগীদের ডাক্তার ও পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে আম খাওয়া উচিত। কারণ আমে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে, যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
এছাড়া যুক্তরাজ্যে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯ থেকে ৬৪ বছরের পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৪০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত খাদ্যতালিকায় এটি ৬০ মিলিগ্রাম। যেহেতু এক কাপ আমে প্রায় ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে, সেহেতু অন্য কোনো জটিলতা না থাকলে একজন সুস্থ মানুষ ওই পরিমাণ আম খেতেই পারেন।
অনেকেই মোটা হয়ে যাওয়ার ভয়ে আম খেতে চান না। এ বিষয়ে পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম জানান, প্রতি ১০০ গ্রাম আমে ৭৯ থেকে ৮২ গ্রাম ক্যালরি পাওয়া যায়। এছাড়া একটি আমের ৭৫ থেকে ৮৫ শতাংশ পানি থাকে। তবে মজার বিষয় হলো, আমে কোনো কোলেস্টেরল থাকে না। এমনকি এতে ক্ষতিকর লবণও নেই। আমে কোলেস্টেরল কম থাকলেও এতে শর্করা বেশি থাকায় এবং অন্যান্য খাবারের বাড়তি ক্যালরির জন্য এটি পরবর্তীতে আমাদের শরীরে গিয়ে শর্করা ই ফ্যাট হিসেবে জমা হয়।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, আমে যেহেতু ক্যালরি অনেক, তাই বেশি আম খেলে ওজন বেড়ে যাবে। সেজন্য যার ওজন বেশি থাকবে, তিনি কম আম খাবেন। অথবা আম খেলে অন্য ক্যালরিযুক্ত খাবার খাবেন না। তাহলেই তো হলো। সকালে বা দুপুরে আম খেল, তার পরিবর্তে ভাত খেলেন না। তাহলে তো মোটা হবে না।
অনেকেই বলে থাকেন, ডায়াবেটিস রোগীরা আম খেতে পারবেন না। যদিও এ বিষয়ে গবেষণার ফলাফল এবং চিকিৎসকদের বক্তব্য ভিন্ন কথা বলছে।
২০১৮ সালে প্রকাশিত ‘ম্যাংগো অ্যান্ড ডায়াবেটিস’ শীর্ষক এক গবেষণাপত্রে দেখা গেছে, ডায়াবেটিস রোগীদের আম খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ না। তবে তাদেরকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আম খেতে হবে। একজন ডায়াবেটিক রোগী দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম আম খেতে পারেন। অথবা দিনের ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তিনি ৫০ গ্রাম করে তিনবারও আম খেতে পারেন। তবে খাবার খাওয়ার পর এমনিতেও একজন মানুষের রক্তে স্যুগারের পরিমাণ কিছুটা বেশি থাকে। সেখানে আম খেলে এটি আরও বেশি পরিমাণে বাড়বে। অন্যান্য শর্করার সঙ্গে আম বেশি খেলেও ডায়াবেটিস বাড়তে পারে।
পুষ্টিবিদ তাসনিম বলেন, দুই বেলার প্রধান খাবার খাওয়ার পর আম খাওয়া ভালো। তবে খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর আম খাওয়া উচিত। আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স মাঝারি মাত্রার, ৬০ থেকে ৮৫। তাই বেশি আম খেলে রক্তে শর্করা বেড়ে যেতে পারে। একজন ডায়াবেটিস রোগী দৈনিক একটি ছোট আম বা অর্ধেক মাঝারি আম খেতে পারেন।
বাজারে গাছপাকা রসালো আম ওঠতে শুরু করেছে। সাধারণত এপ্রিল মাস থেকেই কাঁচা আম পাওয়া যায়। তবে পাকা আম আসতে শুরু করে মে মাস থেকে। জুলাই বা আগস্ট পর্যন্ত দেশি আম পাওয়া যায়।