সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪

মেহেরপুর জেলায় পালিত কোরবানীর পশু জেলার চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। মেহেরপুর জেলায় কোরবানীর জন্য প্রস্তুত ১ লাখ ৯০ হাজার ৮৩৮টি পশু। স্থানীয়ভাবে কোরবানীর চাহিদা ৯০ হাজার ১৯৩টি। অতিরিক্ত পালন হয়েছে ১ লাখ ৬৯৫টি। খামারিদের মতে মেহেরপুরে পালিত কোরবানীর পশুর অনেকাংশ সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলার বাজারে বেচা কেনা করা হয়। এছাড়া ঢাকা ও বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলার ব্যাপারিরা কিনে নিয়ে যায় মেহেরপুরের পশু।

মেহেরপুর জেলায় ৪’শ টি বাণিজ্যিকসহ ২৯ হাজার ১০৫টি খামার আছে। বছর জুড়ে খামারে গরু লালন পালনে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়াতে এবার পশুর দাম কিছুটা বেড়েছে।

জেলার বেশ কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা গেছে, নেপালী, অস্ট্রেলিয়ান, ফিজিয়ান, হরিয়ানাসহ নানা জাতের গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। বিভিন্ন খামারীর সাথে কথা হয়েছে। তাদের চোখে মুখে দেখা গেছে আনন্দ ,আবার বিক্রি হবে কিনা সেই চিন্তায় কারোর কপালে চিন্তার ভাজ ।

দরিদ্র কৃষকের বাড়িতে এক দুএকাটি করে গরু লালন পালন করা হচ্ছে। পারিবারিকভাবে গরু পালন করা প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেক পরিবারের। সারা বছর গরু পালনের পর এখন এসেছে কাঙ্খিত বিক্রির সময়। স্বপ্নের গরু বিক্রির টাকায় মিটবে পরিবারের চাহিদা। বাড়তি অর্থ দিয়ে আবারও নতুন গরু কেনার লক্ষ্য রয়েছে গরু পালনকারী পরিবারগুলোতে।

গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের খামারী সাহারুল ইসলাম জানান, গ্রাম থেকে শহর গরু পালন হচ্ছে সমানে। গ্রামের একেকটি বাড়ি যেন একেকটি খামার। পরিবার প্রধান নারী-পুরুষ মিলে পরিচর্যা করেন গরুগুলো। পরম যত্নে নিজের সন্তানের মতই আদর করা হয়। পুষ্টিসম্মৃদ্ধ খাবার ও সঠিক পরিচর্যায় গরুগুলো বেড়ে উঠে কাঙ্খিত মাত্রায়। তার খামারে আছে ৩৭টি গরু। প্রতিবছর চট্টগ্রামের ব্যাপারিরা কিনে নিয়ে যায়।

সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের রেবেকা খাতুন জানান, তিনি গত কোরবানীর পর ৫০ হাজার টাকায় একটি বাছুর গরু কেনেন। লালন পালনে খরচ গেছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। তিনি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় গরুটি বিক্রি হবে বলে আশা করছেন। তারমতো ওই গ্রামে অন্তত ৩০টি পরিবারে একটি করে গরু পালন করেছেন কোরবানীর জন্য। এ গরু পালন করেই সফলতার মুখ দেখছেন তারা।

সদর উপজেলার বুড়িপোতা গ্রামের খামার মালিক জিল্লুর রহমান জানান, এবার কোরবানী সামনে রেখে লাভের আশায় ৬৫টি গরু ও ১শ টি ছাগল প্রস্তুত করেছেন। বর্তমানে অনলাইনে পশু বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন- এবার বিনিয়োগও করেছেন প্রচুর অর্থ। গত দুই বছর ধরে অনলাইনে পশু বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

একই কথা জানান ,উজ্জলপুর গ্রামের প্রান্তিক খামার মালিক তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, কোরবানী সামনে রেখে পরিবারের সর্বস্ব ব্যয় করে তিনি তিনটি গরু মোটাতাজা করেছেন। নিজে ঠিকমতো না খেয়ে গরুর পেছনে ব্যয় করেছেন অর্থ ও শ্রম। তবে দাম বেশি হওয়ায় এবার পশু বিক্রি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন মেহেরপুর জেলার বেশ কজন খামার মালিক।

গাংনী উপজেলার তেতুঁলবাড়িয়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী মাহবুবুল আলম জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর গরু ছাগলের দাম কিছুটা বেশি। তিনি প্রতি বছর কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে গরু ছাগল কিনে ট্রাকযোগে ঢাকার পশু হাটে বিক্রি করেন। এবছর গরু ছাগলের দাম কিছুটা বেশি হলেও পদ্মা সেতুর ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থাটা সহজ হয়েছে। কোন যানজট ছাড়াই এবার পশু বহন করা যাবে।

মেহেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হারিছুল আবিদ বলেন, এ জেলায় কোরবানী যোগ্য পশু হিসেবে ষাঁড়-বলদ-গাভি মিলিয়ে ৫৯ হাজার ২২০টি গরু, ৫৪৪টি মহিষ, ১ লাখ ২৮ হাজার ৮০টি ছাগল এবং ২ হাজার ৯৯৪টি ভেড়া রয়েছে। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার কোরবানীর পশুর চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। খবর বাসস।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *