নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের পূর্বাচল সরকারি আবাসিক প্রকল্পের আশপাশে সরকারের অনুমতি ব্যতীত অবৈধভাবে গড়ে ওঠা আবাসিক প্রকল্পে থাকা বিভিন্ন সাইনবোর্ডগুলো অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ রোববার (২৬ মে) সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে আদালত এ নির্দেশ দেন।
ঢাকার পূর্বাচলে, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার কিছু অংশ নিয়ে সরকার পূর্বাচল টাউন প্রকল্প গ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন ব্যক্তিদের বরাদ্দ প্রদান করেন এবং এর কিছুদিন পরে উক্ত এলাকার আশপাশ কালিগঞ্জ ও রূপগঞ্জ উপজেলায় অনেকগুলি আবাসন প্রতিষ্ঠান আবাসন প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করেন এবং বিভিন্ন স্থানে প্লট বিক্রির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জলাধারের মধ্যেও সাইনবোর্ড স্থাপন করেন। এ নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয় এবং উল্লেখ করা হয় যে, উক্ত আবাসন কোম্পানিগুলোর বৈধতা নেই এবং এদের দ্বারা জনগণ বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছে।
মিডিয়ার সংবাদকে গুরুত্ব দিয়ে জনস্বার্থে হিউম্যান রাইট ফর বাংলাদেশ একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। আদালত শুনানি শেষে রুল জারি করে উক্ত এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন খাল, বিল ও জলাধার যাতে ভরাট করতে না পারে সে ব্যাপারে স্থিতি অবস্থার আদেশ প্রদান করেন। পরে বিবাদীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক আদালতে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট দাখিল করেন এবং বিভিন্ন অবৈধ সাইনবোর্ড উচ্ছেদের কথা আদালত অবহিত করেন।
এর তিন বছর পর পুনরায় উক্ত এলাকা সমূহের বিভিন্ন জলাধারে আবাসন কোম্পানিগুলো আবারো সাইনবোর্ড স্থাপন করে, উক্ত বিষয়ের তথ্য জানার পরে এইচআরপিবি সংগঠনের একটি টিম উক্ত এলাকা ভ্রমন করেন এবং তার সত্যতা পান। আদালতে উক্ত অবস্থার ছবিসহ আবেদন দাখিল করে এবং সাইনবোর্ডগুলো অপসারণের নির্দেশনা চান।
উক্ত বিষয় শুনানির সময় আবেদনকারীর পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন উক্ত সাইনবোর্ডগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন জনগণ বিভিন্নভাবে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু, আবাসন কোম্পানিগুলোর কোনো প্রকার অনুমোদন নেই। এমনকি বিভিন্ন জলাধার, খাল, পুকুরের মধ্যেও সাইনবোর্ড স্থাপন করে সেগুলো বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী এ সকল জলাধার ভরাট করার কোনো বিধান আইনে দেওয়া হয়নি।
আজ (রোববার) এ সংক্রান্ত আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিচারপতি জেবিএম হাসান এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিলের আদালত আগামী দুই মাসের মধ্যে রুপগঞ্জ এবং কালীগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় নিম্নোক্ত আবাসন কোম্পানিগুলোর সাইনবোর্ড অপসারণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। উক্ত আবাসন কোম্পানিগুলো হল- প্লাটিনাম পূর্বাচল সিটি, সিটি ক্লাউড, কানাডা সিটি, জমিনদার সিটি, সিটি রিম ঝিম, ড্রিমলান সিটি, হোমল্যান্ড পূর্বাচল সিটি, হোমটাউন পূর্বাচল সিটি, প্রিতি রিয়েলি স্টেট, মাসকট সিটি, পুষ্পিতা হাউজিং, নন্দন সিটি, বেস্ট ওয়েবসিটি, মালুম সিটি, মেরিন সিটি, স্বপন সিটি, ইউনাইটেড পূর্বাচল ল্যান্ড লিমিটেড, এজি প্রপার্টিজ লিমিটেড, নাভানা রিয়েল এস্টেট, বিশ্বাস বিল্ডার্স, নীলাচল হাউসিং, বাগান বিলাস, রূপায়ন ল্যান্ড, আদর্শ আইডিয়াল লিমিটেড, তেপান্তর হাউজিং লিমিটেড, মেট্রোপলিটন ক্রিস্টিয়ান কো-অপারেটিভ হাউজিং, গ্রাম্ফ ইন্টারন্যাশনাল, নর্থ সাউথ হাউসিং, মঞ্জিল হাউসিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট, শিকদার রয়েল সিটি, কপোতাক্ষ গ্রিন সিটি, ডিভাইন ফোল্ডিং, শতাব্দি হাউজিং, স্বর্ণ ছাযয়া রিয়েল এস্টেট, ভিশন ২১ ডিজাইন, ওশেন হ্যাভেন লিমিটেড, চন্দ্রিমা লিমিটেড এবং ফেয়ার ডিল শিপিং লিমিটেড।
উক্ত আদেশ বাস্তবায়ন করে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে আগামী ২৯ জুলাই এর মধ্যে আদালতে কম্প্লায়েন্স রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেন।
এইচআরপিবির পক্ষে পিটিশনার হলেন, অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ৈই। বিবাদীরা হলেন, পরিবেশ, হাউসিং ও ভুমি সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, ডিজি পরিবেশ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক, ডিসি, এসপি গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ মোট ১৪ জন।
আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন সিরিয়ার অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মন্ডল, অ্যাডভোকেট নাসরিন সুলতানা ও এডভোকেট সেলিম রেজা। রাজউকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইমাম হাসান। আর সরকার পক্ষে ছিলেন ডিএজি মাইনুল হাসান।