বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে রোববার মধ্যরাত থেকে। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে বরগুনার বেশিরভাগ মাছ ধরার ট্রলারই ফিরেছে বিভিন্ন উপকূলে। তবে অভিযোগ রয়েছে নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন হয়ে পড়া জেলেদের মধ্যে অনেকেই পান না সরকার নির্ধারিত খাদ্য সহায়তা। এছাড়া নিষেধাজ্ঞার সময়ে প্রতিবেশী দেশের জেলেরা দেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ শিকার করবে এমন আশঙ্কা রয়েছে সাধারণ জেলেদের।
সমুদ্রে মাছের উৎপাদন বাড়াতে ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এরপর থেকে প্রতিবছর ২০ মে থেকে শুরু হয়ে ২৩ জুলাই পর্যন্ত চলে এ নিষেধাজ্ঞা। এ সময় বঙ্গোপসাগরে কোনো প্রকার মাছ শিকার করতে পারেন না জেলেরা। দীর্ঘদিনের এ নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন হয়ে পড়ে উপকূলের অসংখ্য জেলে। এদের মধ্যে নিবন্ধনকৃত জেলেদের ৮৬ কেজি করে খাদ্য সহায়তা বরাদ্দ থাকলেও কোনো ধরনের সহায়তা পান না নিবন্ধনহীন জেলেরা। ফলে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন পরিবার পরিজনের ভরণপোষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটে জেলেদের। এছাড়া যাদের সহায়তা পাওয়ার কথা তারা সঠিক সময়ে বরাদ্দকৃত পরিমাণ সহায়তা না পওয়ার অভিযোগ রয়েছে জেলেদের।
সরেজমিনে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন করতে সমুদ্র থেকে অসংখ্য মাছ ধরার ট্রলার ফিরে নোঙর করেছে উপকূলের বিভিন্ন এলাকায়। দীর্ঘদিনের কর্মবিরতিতে জেলেদের অনেকেই বাড়িতে ফিরছেন পরিবারের কাছে। আবার কেউ কেউ শুরু করেছে ট্রলার ও জাল মেরামতের কাজ।
ঢলুয়া এলাকার বাসিন্দা নাসির নামের এক জেলে বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়ে আমরা ৪০ কেজি চাল পাই। এছাড়া যারা জেলে না তারাও চাল পায়। কিন্তু আমাদের জন্য বরাদ্দ ৮৬ কেজি চাল আমরা পাই না। এই দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞায় ৪০ কেজি চালে আমাদের পরিবার পরিচালনা কষ্ট হয়।
একই এলাকার জেলে মাহবুব বলেন, যারা জেলে না তারা চাল পায়। আর আমরা জেলে হয়েও চাল পাই মাত্র ৪০ কেজি। প্রকৃত জেলেদের মধ্যে অনেক জেলেই চাল পায় না।
ঢলুয়া এলাকার জেলে এসাহাক বলেন, মালিকের সঙ্গে সাগরে মাছ শিকার করে আমরা ঋণগ্রস্ত হই। যে চাল পাই তা দিয়ে পরিবার চলে না। এ কারণে আমরা আরও ঋণগ্রস্ত হয়ে যাই। এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যানরা প্রকৃত জেলেদের চাল দেয় না। আমরা যদি কারো কাছে কিছু বলতে যাই তাহলে আমাদেরকে আবার রাগারাগি করা হয়। এছাড়া চাল পেতে অনেক সময় আমাদের টাকাও দিতে হয়।
জানা যায়, বরগুনায় ২৭ হাজার ২৫০ জন সমুদ্রগামী জেলে রয়েছে। এসব জেলেদের জন্য প্রথম ধাপে সহায়তার চাল বিতরণ করতে গত ২৯ এপ্রিল ১ হাজার ৫২৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেন, জেলা পর্যায়ে আমরা ট্যাক্স ফোর্সের সভা করেছি। এছাড়া গত মাসে মন্ত্রী মহোদয়ের সমন্বয়ে একটি জুম মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে সভার সিদ্ধান্তের আলোকে জেলেদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৫৬ কেজি ও দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হবে। সমুদ্রগামী জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত এসব চাল আমরা পেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলেদের কাছে বরাদ্দকৃত চাল পৌঁছে দিতে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে।