নভেম্বর ২৭, ২০২৪

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসে অস্থায়ী শিবির বসিয়েছেন। কয়েক দিন ধরে চলা এ বিক্ষোভ দমনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। তারা বৃহস্পতিবার বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শত শত শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছেন। কিছু কিছু ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর শক্তিপ্রয়োগ করেছেন পুলিশ সদস্যরা। কোথাও কোথাও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে ক্যালিফোর্নিয়ার শীর্ষস্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে লক্ষাধিক লোকের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ বাইডেন প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি করছে।

গত সপ্তাহে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে প্রথম গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে ডাকার পর সেখানে নতুন করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রেপ্তারের পর নতুন করে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। এরই জেরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ইহুদি-প্রভাবিত যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এমন বিক্ষোভ নজিরবিহীন ঘটনা।

যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভের নেতৃত্বদানকারী চিসাতো মিমুরা বিবিসিকে বলেছেন, গাজায় গণহত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-সরঞ্জাম সরবরাহ ও ইসরায়েলে অর্থায়নের ঘটনায় আন্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষুব্ধ। গণহত্যায় ভূমিকা রাখায় অনেক বিক্ষোভকারী বাইডেনকে ‘জেনোসাইড জো’ বলে বিদ্রুপ করছেন।

তবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বৃহস্পতিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার অধিকারকে সমর্থন করে।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক প্রচেষ্টা সহায়তাকারী যে কোনো কোম্পানি এবং কিছু ক্ষেত্রে ইসরায়েল থেকে নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন।

বিক্ষোভকারীদের মূল দাবি হলো গাজার যুদ্ধ থেকে লাভবান হওয়া ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের বিচ্ছিন্ন করুক। তারা ইসরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি তুলছেন।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খইমানি জেমস বলেছেন, ‘আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’ বিক্ষোভে ফিলিস্তিনি, আরবসহ বিভিন্ন পটভূমির ছাত্রদের দেখা যাচ্ছে। এতে অনেক ইহুদি শিক্ষার্থীও অংশ নিয়েছেন।

সিএনএন জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করছে এবং অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছে।

ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনি পতাকা নেড়ে, ঢোল পিটিয়ে এবং স্লোগান দেন। জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অধ্যাপকদের একটি দল প্রতিবাদে ওয়াকআউট করে এবং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে জর্জ ওয়াশিংটন ক্যাম্পাসে মিছিল করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খ্যাতনামা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সোমবার ক্লাসের আগে বেশির ভাগ গেট বন্ধ করে দেয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়ধারী ছাড়া প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিষ্ঠানটি অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে তাঁবু বা টেবিল স্থাপনের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তাও পোস্ট করেছে। তা সত্ত্বেও বুধবার ১৪টি তাঁবুসহ শিবির স্থাপন করেন বিক্ষোভকারীরা।

ইমোরি ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। আটলান্টা পুলিশ ও জর্জিয়ার সেনারা সেখানে শিবির ভেঙে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁবু বসানো কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে পুলিশ ক্যাম্পাস থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

বোস্টন পুলিশ জানায়, এমারসন কলেজের একটি ক্যাম্প থেকে ১০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে ছাত্ররা শিবির স্থাপন করেছেন। পুলিশ বুধবার বলেছে, সেখান থেকে বৃহস্পতিবার ১৩৩ বিক্ষোভকারীকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পরে অবশ্য তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। সেখানেও তাঁবু ফেলে শিবির বসানো হয়। সোমবার সেখানে ৪৪ শিক্ষার্থীসহ ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি ব্লুমিংটনে ঢাল ও লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয় এবং ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। ক্যাম্পাসে ক্যাম্প বসানোর পর পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজধানী ওয়াশিংটনে জর্জটাউন ও জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের (জিডব্লিউ) শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বৃহস্পতিবার অস্থায়ী শিবির প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিক্ষোভকারীদের অবস্থান এখন হোয়াইট হাউস ও পররাষ্ট্র দপ্তরের অদূরেই।

প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির বিক্ষোভ থেকে অচিন্থিয়া শিবালিঙ্গম নামে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক নারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মিনিসোটার ডেমোক্র্যাটদলীয় কংগ্রেস উইমেন ইলহান ওমর ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেছেন। গত সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া ইলহানের মেয়ে ইসরা হিরসিকে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করে পুলিশ। ইলহান বিবিসিকে বলেছেন, এই বিক্ষোভ মাত্র ৭০ জন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি বিক্ষোভ দমনের সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার লঙ্ঘন করেছে। এ কারণে বিক্ষোভ এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।’

স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল

ইসরায়েলবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের জেরে লস অ্যাঞ্জেলেসের দ্য ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার (ইউএসসি) প্রধান স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাতিল করা হয়েছে অনুষ্ঠানটি। আগামী ১০ মে এটি হওয়ার কথা ছিল।

ইউএসসি কর্তৃপক্ষ বিবৃতিতে বলেছে, এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী, তাদের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের উপস্থিতিতে ১০ মে নির্ধারিত স্নাতক অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না

এর আগে গত বুধবার পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অন্তত ৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করে এবং সেখানে স্থাপন করা বিক্ষোভকারীদের অস্থায়ী শিবির ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

ফ্রান্সের নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভ

প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি সায়েন্সেস পোর প্রধান ক্যাম্পাস ভবনে কয়েক ডজন শিক্ষার্থী ফিলিস্তিনিপন্থি অবরোধ চালাচ্ছেন। শুক্রবার ওই ক্যাম্পাসে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস অবরোধ করছেন।

ভবনের জানালা থেকে ছাত্রদের ফিলিস্তিনপন্থি স্লোগান দিতে দেখা গেছে। ছাত্ররা প্যারিসের বাম তীরে বিখ্যাত বুলেভার্ড সেন্ট জার্মানের কাছে অবস্থিত রাস্তায় প্রবেশে বাধা দেওয়ার জন্য ব্যারিকেডও তৈরি করেছেন। ছাত্রদের ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লো

গান দিতে শোনা যায়।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...