নভেম্বর ২৭, ২০২৪

দেশে গত পাঁচ মাসে প্রায় ৩৫ লাখ মুঠোফোন (মোবাইল) ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা কমেছে। এর বিপরীতে বেড়েছে ব্রডব্যান্ড (আইএসপি ও পিএসটিএন) ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা। এমন তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাহকপর্যায়ে মুঠোফোন ইন্টারনেটের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে খরচ বাঁচাতে সাধারণ মানুষজন এখন ব্রডব্যান্ডে ঝুঁকছেন।

বর্তমানে দেশে চারটি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকপর্যায়ে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে— গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা, বাংলালিংক এবং টেলিটক।

বিটিআরসির প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী— ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক ছিল ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার। আর ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক কমে ১১ কোটি ৬৩ লাখে নেমেছে। বিটিআরসি চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্তই হিসাব প্রকাশ করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসের তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি।

সংস্থাটির প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনা করে আরও দেখা যায়, ২০২৩ সালের আগস্টে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার। এরপর সেপ্টেম্বর থেকে গ্রাহক কমতে শুরু করে। সেপ্টেম্বরে ২০ হাজার গ্রাহক কমে ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজারে নেমে যায়। অক্টোবরে এক লাফে ৩ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক কমে দাঁড়ায় ১১ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজারে। নভেম্বর প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক কমে যায়। ওই মাসে গ্রাহক ছিল ১১ কোটি ৮৯ লাখ ৬০ হাজার। এরপর ডিসেম্বর তা কমে ১১ লাখ ৮৪ লাখ ৯০ হাজারে নেমে যায়। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা কমে ১১ কোটি ৬০ লাখ ৩০ হাজারে নামে।

অপরদিকে আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) ও পিএসটিএন (পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক) এর প্রতি ঝুঁকতে দেখা গেছে গ্রাহকদের। সেখানে ইন্টারনেট গ্রাহক উল্টো বেড়েছে। তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আইএসপি ও পিএসটিএন গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৪ লাখ ৯০ হাজার। অক্টোবর ও নভেম্বরে এ ইন্টারনেটের গ্রাহকের সংখ্যায় হেরফের হয়নি। ডিসেম্বরে আইএসপি ও পিএসটিএন ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসেও একই গ্রাহক সংখ্যা বজায় রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে সাধারণ গ্রাহকরা বলছেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে অতিরিক্ত দামের ইন্টারনেট গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য মোবাইলের ডাটা নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে বাসা-বাড়ি কিংবা অফিসের ওয়াইফাইয়ের উপরই ভরসা করছেন তারা।

টেলি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টিক্যাব) আহ্বায়ক মো. মুর্শিদুল হক বলেন, উচ্চমূল্যের মুঠোফোন প্যাকেজ গ্রাহকদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। বর্তমানে গ্রাহকরা অপারেটরগুলো দ্বারা বহুমুখী পন্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিকে গ্রাহকদেরকে উচ্চমূল্যে নির্দিষ্ট মেয়াদের প্যাকেজ কিনতে হচ্ছে অপরদিকে মাস শেষে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই প্যাকেজের অব্যবহৃত ডাটা ও টকটাইম ব্যবহারের সুযোগ থাকছে না। কারণ অপারেটর কোম্পানিগুলোর শর্ত হচ্ছে অব্যবহৃত ডাটা ও টকটাইম ব্যবহার করতে হলে এক মাস শেষ হওয়ার পূর্বে সেই একই প্যাকেজ পুনরায় চালু করতে হবে। কিন্তু টিক্যাবের কাছে অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন ‘মাই অফার’ থেকে একটি প্যাকেজ রিচার্জের পরবর্তী মাসে ৩০ দিন মেয়াদের মধ্যে সেই একই প্যাকেজটি আর তাদেরকে দেওয়া হয় না। ফলে তারা তাদের অব্যবহৃত ডাটা ও টকটাইম ব্যবহার করতে পারেন না।

তিনি বলেন, এভাবে একটি প্যাকেজের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের পরও গ্রাহকদের তার পূর্ণ ব্যবহারের সুযোগ না দিয়ে অপারেটরগুলো অব্যবহৃত ডাটা ও টকটাইম একাধিকবার বিক্রি করছে। যা নৈতিক ভাবেও সমর্থনযোগ্য নয়।

তাই সংশ্লিষ্ট সব স্টেক হোল্ডারের কাছে মুঠোফোন প্যাকেজের মূল্য কমিয়ে সাধারণ ও নিম্ন আয়ের গ্রাহকদের স্বস্তি দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...