ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

একজন সুস্থ মানুষ রোজা রাখলে তার অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক হওয়ার তেমন কোনো আশংকা নেই। যদি তিনি ইফতার ও সেহরিতে নিম্নোক্ত নিয়মগুলো মেনে চলেন।

* ইফতারের সময় যা করতে হবে

▶ ইফতারে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার কিংবা তেলে ডুবিয়ে যেসব খাবার তৈরি করা হয় যেমন পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, চিকেন ফ্রাই, জিলাপি ইত্যাদি যতটুকু সম্ভব পরিহার করতে হবে।

▶ একসঙ্গে অনেক বেশি খাবার খাওয়া যাবে না। অনেকে ইফতারে বসেই খেতে খেতে ইসোফেগাস তথা গলা পর্যন্ত খেয়ে ফেলেন। এটা কখনোই করা যাবে না।

▶ ইফতারে ইসবগুলের শরবত, ডাবের পানি ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। শর্করা জাতীয় খাবার যথা-খেজুর, পেয়ারা, ছোলা, সেমাই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।

▶ ইফতার হতে হবে লাইট মিল কিংবা অল্প পরিমাণ খাবার। তারপর মাগরিবের নামাজ পড়ে রাতের খাবার খেয়ে নেওয়া ভালো। সম্ভব হলে তারাবির নামাজের আগেই খেয়ে নিতে হবে। তাহলে খাবারের পরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে নামাজ পড়তে গেলে এক প্রকার ব্যায়াম হয়ে যাবে এবং সেটি খাবার পরিপাকের ক্ষেত্রে সহায়ক। সেই সঙ্গে অ্যাসিডিটি হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে।

▶ অবশ্যই রোজার মাসে অ্যাসিডিটি থেকে বাঁচার জন্য ডিনার কিংবা সেহরি উভয়ক্ষেত্রে শোয়ার ১ ঘণ্টা আগে খাবার শেষ করতে হবে এবং খেয়ে অবশ্যই কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে তারপর ঘুমাতে হবে। অন্যথায় অ্যাসিডের ব্যাক ফ্লো হয়ে GERD-এর মতো রোগ হতে পারে।

▶ টক জাতীয় ফলে ভিটামিন সি’র পাশাপাশি সাইট্রিক অ্যাসিডও থাকে। তাই রোজার সময় টক ফল সাবধানতার সঙ্গে খেতে হবে। ভালো হয় রাতের খাবার শেষ করে খেলে।

▶ ইফতারের সময় টমেটো অনেকের প্রিয় খাবার। তবে টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রিক অ্যাসিড ও ম্যালিক অ্যাসিড থাকে এবং এটা পাকস্থলীতে ইরিটেশন করে। তাই টমেটো বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো।

▶ ঝাল খাবার পাকস্থলিতে অ্যাসিডিটির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই কাঁচামরিচ কিংবা অতিরিক্ত ঝাল খাবার পরিহার করে চলতে হবে।

▶ গরম খাবার যথা-চা, কফি ইত্যাদি পাকস্থলিতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই রোজার সময় চা, কফি ইত্যাদি পরিহার করে চলা উচিত।

* সেহরির সময় যা করণীয়

ফজর নামাজের সময় হওয়ার আগ পর্যন্ত সেহরি খাওয়া যায়। একটু দেরিতে সেহরি খাওয়ার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। এতে সেহরি শেষ করে ফজর নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া যায়। নামাজ শেষ করে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। এটি খাবার পরিপাকে সহায়তা করে। অনেকেই ফজরের সময় হওয়ার ১-২ ঘণ্টা আগে সেহরি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। খাবার খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়া অ্যাসিডিটির অন্যতম কারণ। সেহরির খাবারেও এসব জিনিস পরিহার করা উচিত যা অ্যাসিডিটি বাড়ায়, যেমন-চর্বিজাতীয় খাবার, অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, চা, কফি ইত্যাদি।

* আগে থেকেই অ্যাসিডিটি কিংবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে করণীয় কী

যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা কিংবা গ্যাস্ট্রিক রোগ রয়েছে, তারা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে পারেন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। তারাও রোজা রাখতে পারবেন, সেক্ষেত্রে উপরের নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। গ্যাস্ট্রিকের কয়েক ধরনের ওষুধ রয়েছে, তার মধ্যে অ্যান্টাসিড কিংবা ল্যান্সোপ্রাজল ক্যাপসুল খাওয়া যেতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। অ্যান্টাসিড প্লাস সিরাপ সন্ধ্যায় খাবারের পরে খাওয়া যায়। ল্যান্সোপ্রাজল ক্যাপসুল ভোর রাত্রে খেলে উপকার পাওয়া যায়। মেডিসিন নেওয়ার পরেও যদি কারও রোজা রাখতে বেশি কষ্ট হয় অথবা যদি প্রচণ্ড বুকে ব্যথা ওঠে তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ নিন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...