নভেম্বর ২৭, ২০২৪

আঠারো কোটি মানুষের দেশে সরকারি হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) শয্যা সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ১০১টি; এর মধ্যে আবার অকার্যকর ২১২টি। এ পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, দেশে আইসিইউ শয্যা সংকট কতটা ভয়াবহ। এর একটি শয্যা পাওয়া মানে হাতে সোনার হরিণ পাওয়া!

ঢাকা মেডিকেল ও সোহরাওয়ার্দীর মতো হাসপাতালে প্রতিদিন একটি আইসিইউ বেড পেতে জমা পড়ে ৩০ থেকে ৪০টি আবেদন। শয্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা হলেও জনবলের অভাবে তা চালু করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। কেবল ঢাকাতেই নয়, জেলা পর্যায়েও বাড়নো হচ্ছে আইসিইউ সেবা। তবে কবে নাগাদ চালু হবে তা নিশ্চিত করা যায়নি।

কথা হচ্ছিল সবুজের সঙ্গে। নয় দিন হলো রাজধানীর এ হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতাল, তিন জায়গায় ছোটাছুটি করতে হচ্ছে তার। গত ৭ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে এক দুর্ঘটনায় তার ছোট ভাইসহ তিনজন এখন আইসিইউতে কোমায়। এতদিনের চেষ্টার একজনকে সরকারি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে পারলেও বাকি দুজন একনও বেসরকারি হাসপাতালে। এতে প্রতিদিনই বাড়ছে বিলের পারদ। এদিকে, মিলছে না সরকারি হাসপাতালের একটি শয্যা।

একই অবস্থা সোহরাওয়ার্দীর বেডে থাকা সত্তর বছরের এক বৃদ্ধার। নানা জটিলতায় কমছে অক্সিজেন লেভেল, দরকার নিবিড় পরিচর্যার; কিন্তু খালি নেই বেড। একই চিত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজে। জাহিদের মায়ের জন্য একটি আইসিইউ পেতে এদিক-ওদিক ধরনা দেয় গত কয়েক দিন। অবশেষে মিলেছে টোকেন। সিরিয়াল নম্বর ২৯।

ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোর এ চিত্র নিয়মিত। শনিবারের (১৬ মার্চ) হিসাব কেবল ঢাকা মেডিকেল কলেজে ৩২টি শয্যার বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ৩৮টি, যদিও সারাদিনে খালি হয়েছে মাত্র একটি। প্রায় একই অবস্থা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। দিনভর একটিও বেড খালি হয়নি; তবে আবেদন পড়েছে ২৮টি।

অধিদফতরের তথ্য বলছে, সারা দেশে সচল আইসিইউ বেডের সংখ্যা ১ হাজার ১০১। এর মধ্যে ঢাকায় ৫২৮টি, যার মধ্যে ২১২টি ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে। যদিও জনবল সংকটে সেখানে করোনা বাদে অন্য রোগী ভর্তি সম্ভব হয় না।

ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক কর্নেল ডা. এ কে এম জহিরুল হোসেন খান বলেন, ‘আমাদের কিছুটা সীমাবদ্ধতাও আছে। এর মধ্যেও কোভিড রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।’

এদিকে, ঢাকা মেডিকেলে ১৫টি, আর সোহরাওয়ার্দীতে ১০টি নতুন বেড সংযোজনের প্রয়োজনীয় ইক্যুইপমেন্ট থাকলেও দক্ষ জনবলের অভাবে সেগুলো ইনস্টল করা যাচ্ছে না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের নানা সীমাবদ্ধতা আছে। একটা আইসিইউতে যেমন যন্ত্রপাতি লাগে, তেমন জনবলও লাগে। কিন্তু আমাদের এখানে আইসিইউ পরিচালনার জন্য জনবলের ঘাটতি আছে।’

আর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শফিউর রহমান বলেন, আমাদের আরও ১০ বেডের আইসিইউ চালু করার প্রস্তাবনা রয়েছে। আইসিইউ বেড আনাও হয়েছে; জায়গাও নির্ধারণ করা আছে। কিছু লজিস্টিক আছে। এখন স্থাপনের জন্য আমাদের মূল সমস্যা হলো জনবল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দরকার এ ব্যবস্থাপনার ডিসেন্ট্রালাইজেশন। আর অধিদফতরও বলছে, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পনা করছেন তারা। তবে তা কবে নাগাদ বাস্তবায়ন করা যাবে জানানা নেই কারও।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘শুধু ঢাকায় আইসিইউ না থেকে প্রতি বিভাগে আইসিইউ রাখা যায় কি-না, সেটা ভেবে দেখা দরকার। আর সংশ্লিষ্ট বিভাগের অন্তর্গত জেলাগুলোতে আইসিইউ সার্ভিসটা ওই বিভাগ থেকেই দেয়া যেতে পারে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, এ বছরই হয়ত ২ হাজার জনবল নিয়োগের প্রজ্ঞাপন দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আরও ৬ হাজার চিকিৎসক নেয়া হবে। প্রতিটি জিনিসই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একটু ধৈর্য ধরতে হবে। শিগগিরই সারা দেশে অনেক আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা করা হবে। সূত্র সময়টিভি।

করোনাকালীন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যে ক্ষত সামনে এসেছে, গেলো চার বছরে তা ঘুচাতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...