যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) গতকাল বুধবার ইটিএফের মাধ্যমে বিটকয়েনে বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা এখন থেকে প্রথাগত বিনিয়োগ মাধ্যমে বিটকয়েনে বিনিয়োগ করতে পারবেন। রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, এই অনুমোদন ক্রিপ্টেকারেন্সির জগতে যুগান্তকারী ঘটনা।
তবে এই অনুমোদন খুব সহজে দেওয়া হয়নি। সেই ২০১৩ সাল থেকে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলো ইটিএফের মাধ্যমে বিটকয়েনে অনুমোদন লাভের চেষ্টা করছিল। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি বিটকয়েনের বাজার নিয়ন্ত্রণের অভাবজনিত কারণে এত দিন অনুমোদন দেয়নি।
এরপর ২০২৩ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালতের নির্দেশে বলা হয়, এসইসি ভুল কারণ উল্লেখ করে গ্রেস্কেল ইনভেস্টমেন্টসের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। আদালত গ্রেস্কেলের পক্ষে রায় দিয়ে এসইসিকে তাদের আবেদন পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করে। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল এ অনুমোদন দেয় এসইসি। গতকাল গ্রেস্কেলের পাশাপাশি আদালত এআরকে ইনভেস্টমেন্ট, ব্ল্যাকরক ও ফিডেলিটির আবেদন অনুমোদন করেন।
ইটিএফ–সমর্থিত বিটকয়েন কীভাবে কাজ করে
উল্লিখিত কোম্পানিগুলোর ইটিএফ–সমর্থিত বিটকয়েন নাসডাক, নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ ও সিবিওইর মতো বড় বড় স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত হবে। ফলে যে বিনিয়োগকারীরা পরিচিত প্ল্যাটফর্মে লেনদেন করতে অভ্যস্ত, তাঁদের জন্য বিনিয়োগ করা সুবিধাজনক হবে।
এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফ একধরনের বিনিয়োগ, যা সহজেই স্টক মার্কেটে লেনদেন করা যায়। একটি নির্দিষ্ট স্টক, পণ্য বা সিকিউরিটিসের সরাসরি মালিকানার পরিবর্তে বিনিয়োগকারীরা ইটিএফ কিনতে এবং ধরে রাখতে পারেন, যা আবার সম্পদমূল্যের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। ইটিএফ বিটকয়েনের দাম পর্যবেক্ষণ করবে, ফলে যারা বিটকয়েনের দাম সম্পর্কে অনুমান করতে চায়, তারা বিটকয়েনের মালিকানা ছাড়াই তা করতে পারে।
প্রশ্ন হলো, কেন মানুষ সরাসরি বিটকয়েন কিনবে না। বাস্তবতা হলো, মূলধারার সিংহভাগ বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীর জন্য বিটকয়েন ও ক্রিপ্টোকারেন্সি এখনো খুব ঝুঁকিপূর্ণ। বিটকয়েনে লেনদেনের নিয়মকানুন এখনো অস্পষ্ট। পাশাপাশি বিটকয়েনের মালিকানা কিনতে প্রয়োজন বিটকয়েন ওয়ালেট, ক্রিপ্টোর সঙ্গে অপরিচিত মানুষের জন্য যা এখনো রীতিমতো ভীতিকর। ইটিএফ এ ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত পক্ষ। তাদের দ্বারা এটি পরিচালিত হতে পারে।
বিটকয়েন ইটিএফ ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতে বিশ্বাস ও গ্রহণযোগ্যতার একটি নতুন মাত্রা নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এসইসির অনুমোদনের অর্থ হলো, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিটকয়েনে ব্যবসা ও বিনিয়োগ করতে পারবেন। এর মাধ্যমে এখন সহজেই টেসলার শেয়ার, ইউএস বন্ড, সোনা, তেল বা অন্য কোনো ঐতিহ্যবাহী সম্পদে বিনিয়োগ ও তা বিনিময় করা যাবে।
এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকেই বিটকয়েনের দাম বাড়ছে; বাড়ছে অন্যান্য ক্রিপ্টোর দামও। গত ২২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে পৌঁছেছে বিটকয়েন। বুধবার সকালের হিসাবে তা ৪৬ হাজার ডলার পেরিয়ে গেছে। বিটকয়েনের দাম ২০২২ সালের এপ্রিলের পর প্রথমবার এ পর্যায়ে উঠল।
এর আগে ২০২১ সালের নভেম্বরে বিটকয়েনের দাম ৬৯ হাজার ডলারের রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছিল। ফলে ক্রিপ্টো এখনো সর্বোচ্চ স্তর থেকে অনেক দূরে। যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিটকয়েন ইটিএফ অনুমোদন করতে পারে, এ আশায় বছরের শুরু থেকেই বিটকয়েন ঊর্ধ্বমুখী। এ অনুমোদনের পর তা আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।