জোর করে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে জনরোষের আন্দোলনে ছিয়ানব্বইতে ভোট চুরির অপবাদ নিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা দেশের জন্য দুর্ভাগ্যের।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নাম নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে মানুষকে পুড়িয়ে মেরে আন্দোলন করে তারা। বাসে, গাড়িতে, ট্রেনে লঞ্চে-সব জায়গায় তাদের আগুন। তাদের এই অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার আজকে কতো মানুষ পোড়া শরীর নিয়ে কাতর, অসহায় জীবনযাপন করে। নির্বাচন ঠেকাতে চেয়েছিল, পারেনি। জনগণ সাথে না থাকলে পারা যায় না।
‘‘খালেদা জিয়া ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট কারচুপি করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। সেই সময়ে ওই নির্বাচন কিন্তু কেউ মেনে নেয়নি। জনগণের আন্দোলনের কারণে খালেদা জিয়া ৩০ মার্চ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এটাও সবাইকে মনে রাখতে হবে। ভোট চুরি অপবাদ মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়া বিদায় নেয়”- বলেন তিনি।
ভোট কারচুপি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে খুব অবাক লাগে বিএনপি যখন গণতন্ত্রের কথা বলে, ভোটের অধিকারের কথা বলে। ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া, ভোট কারচুপি করা, সিল মারা, হ্যাঁ না ভোট দিয়ে হ্যাঁ ভোটের বাক্স ভরা, এগুলো কে করেছে? এগুলো তো জিয়াউর রহমানই শুরু করেছে। জিয়াউর রহমান অবৈধ ক্ষমতা দখল করে এসবের শুরু করেছে। ওদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাত দিয়ে। ওদের বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করবে কীভাবে?
বিএনপি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে নয়, নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এদের চরিত্র কখনো বদলাবে না। জনগণের কল্যাণ-মঙ্গলের কথা এরা চিন্তা করে না। নিজেদের কথাটা ভালো বোঝে। যখনই ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের ভোট চুরি করা, অর্থ সম্পদ বানানো, বিদেশে অর্থ পাচার করা, মানি লন্ডারিং করা; এমনকি, এতিমের অর্থ পর্যন্ত আত্মসাৎ করেছে। আর তাদের কাছ থেকে বড় বড় কথা শুনতে হয়। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন তারা (বিএনপি) করবে কীভাবে। একটা নমিনেশন দেয় লন্ডন থেকে, একটা আসে পল্টন থেকে আরেকটা আসে গুলশান থেকে। এখন যখন লন্ডনেরটা আসে তখন পল্টনেরটা চলে যায়। যখন পল্টনেরটা আসে তখন গুলশানেরটা যায়। সকালে একটা দেয় তো বিকালে আরেকটা। এভাবে তাদের নির্বাচন পল্টনও গেলো, লন্ডনও গেলো, গুলশানও গেলো। তাও কয়েকটি আসন পেয়েছিল। সংসদে তাদের যে সদস্য ছিল, আমরা কিন্তু তাদের কথা বলার সুযোগ দিতাম। কারণ, আমরা যখন বিরোধী দলের ছিলাম আমাদের কথা বলতে দিতো না। এমনকি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয় নিয়ে একবারও কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। বিরোধী দলীয় নেতা হয়েও আমি কখনো কথা বলার সুযোগ পেতাম না। যে কারণে আমরা গণতন্ত্রের চর্চা করি।
তিনি বলেন, ওই দলের (বিএনপি) তো মাথা নেই। একটা ধর চলছে। সেটাও একটা গুলশান, একটা পল্টন। আর কেউ কেউ অন্ধকার জায়গা থেকে কথা বলে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা করে দিয়েছি। তার সুযোগ নিয়ে তারা কাজে লাগাচ্ছে। আজ হরতাল-অবরোধ ডেকে মানুষকে পুড়িয়ে মারে। রেল লাইন কাটা সরাসরি মানুষ হত্যা করা। কেন মানুষ স্বাধীনভাবে চলতে পারবে না? কেন তাদের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারবে? আমার মনে হয়, দেশের মানুষকে এই প্রশ্ন বিএনপির কাছে করা উচিত।
‘রেল লাইন কেটে মৃত্যুর ফাঁদ পেতে তারা মানুষ হত্যা করেছে। জিয়া আর খালেদা জিয়ার মতো লন্ডনে বসে হুকুম দেয়…আমি বুঝি না বিএনপি নেতারা কী করছে। ওখান থেকে হুকুম দেয়, আর এখান থেকে আগুন দেয়। এই আগুন নিয়ে খেলা, এই খেলা ভালো না বাংলাদেশের মানুষ এটা মেনে নেবে না।’
রেল লাইন কাটা এবং অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশের মানুষকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারা হরতাল ডেকে ঘরে চুপ করে থাকে। এতো টাকার উৎস কোথায়? হাওয়া ভবন খুলে অস্ত্র চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিং করে টাকা পাচার করেছে।
‘যারা রেল লাইন কাটতে যাবে এদের ধরিয়ে দিন। এদের ধ্বংসাত্মক কাজ চলতে পারে না। খালেদা জিয়ার তো বছরের পর বছর অবরোধ চলছে। ওটা এখনও তোলে নাই। বাংলাদেশ যখন কোভিড আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে এগিয়ে যাচ্ছে তখন হরতাল-অবরোধ ডেকে আবারও বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এরা মানুষের কল্যাণ চায় না। তারা ভোটে যায় না কারণ মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। এজন্য নির্বাচন বানচাল করতে চায়।’
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। সারা বিশ্ব এখন সম্মানের চোখে দেখে। কিন্তু আমাদের দেশের কিছু লোক বোঝে না। বুদ্ধি বেচিয়া জীবিকা নির্বাহ করে যারা, তাহারাই বোঝে না। সাধারণ মানুষ বোঝে। তারা আমাদের সাথে আছে। বাংলাদেশের মানুষ বোঝে তাদের কীসে ভালো কীসে মন্দ। আর কোন দল ক্ষমতায় থাকলে তাদের উন্নতি হয়।
আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্র করে উৎখাত করা সহজ নয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের মাটি মানুষের সংগঠন। এর শেকড় অনেক গভীরে। এভাবে আওয়ামী লীগকে উৎখাত করতে পারবে না। সংগ্রাম করে ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা, নির্বাচন সংস্কার আমরা করেছি। জনগণের ভোটের অধিকার তাদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। অগ্নিসন্ত্রাস আর খুন করে জনগণের মন পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে মানুষ তার ভোটের অধিকার পায়, মৌলিক অধিকার পায়। বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র ’৯৬ সালে সরকার গঠন করে ২০০১ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর করি। ২৬ বছরে প্রথম শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। আর সেই নির্বাচন সেখানেও ব্যাপকভাবে অনিয়ম করে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসে। তাদের দুর্নীতি অনিয়মের কারণে ইমার্জেন্সি আসে। তারা তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে। পরে ছাত্র জনতাই কিন্তু প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ শত প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলে এবং আওয়ামী লীগের ওপর যতো আঘাত আসুক; আওয়ামী লীগই জনগণের হয়ে লড়াই করে।
এ সময় কুয়েতের আমির শেখ নাওয়াফ আল-আহমদ আল-সাবাহের মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক পালনের কথা জানিয়ে সোমবারের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ‘বিজয় র্যালি’ পিছিয়ে পরেন দিন মঙ্গলবার করার কথা জানান তিনি।
আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।