নভেম্বর ২৫, ২০২৪

ডাবল সেঞ্চুরি পার করে ২৪০ পর্যন্ত ঠেকা পেঁয়াজের বিক্রি কমেছে খুচরা বাজারে। খোদ খুচরা বিক্রেতারাই বলছেন, আগে যেখানে পাড়া মহল্লার দোকানে দিনে ৩০/৪০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হতো, সেখানে দাম বেড়ে যাওয়ার পর এখন ১৫/২০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করাই কঠিন হয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, অভ্যন্তরীণ বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি করবে না।

এর আগে গত ২৯ অক্টোবর ভারত প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৮০০ ডলার নির্ধারণ করে দেয়, যা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলা হয়েছিল। তার আগেই দেশটি পেঁয়াজ একেবারে রপ্তানি বন্ধ করে দিল।

ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম হুহু করে বাড়তে থাকে। ফলে রোববার এসে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি দাঁড়ায় ২২০ থেকে ২৪০ টাকা।

অন্যদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। অনলাইন শপ চাল ডাল ডটকম, স্বপ্ন, ডেইলি শপসহ অন্যান্য অনলাইন প্লাটফর্মেও পেঁয়াজের দাম রাখা হচ্ছে ২১৯ টাকা।

এ অবস্থায় পেঁয়াজের দাম বাড়তি হওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দোকানগুলোতে পেঁয়াজ কেনা ও বিক্রির পরিমাণ অনেকটাই কমে গেছে। কারণ এত বেশি দাম হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা পেঁয়াজ কিনছেন অল্প পরিমাণে।

রাজধানীর মিরপুর-শেওড়াপাড়া এলাকার মুদি দোকানি ফরিদুল ইসলাম বলেন, বেশিরভাগ দোকানেই আগের পেঁয়াজ ছিল কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়ার খবর পেলে খুচরা ব্যবসায়ীরা আগের কম দামে কেনা পেঁয়াজেরও দাম বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের মত অনেক ব্যবসায়ী যারা নতুন করে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে এনেছি, তারা বেশি দামেই বিক্রি করছি। কিন্তু অন্যরা আগের কম দামে কেনা পেঁয়াজই বেশি দামে বিক্রি করছে।

তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার দেশি পেঁয়াজ ছিল ১৩০ টাকা আর ভারতীয় পেঁয়াজ ছিল ১১০ টাকা কেজি। সে পেঁয়াজ রোববারে এসে দেশিটা ২২০ থেকে ২৪০ আর ভারতীয় পেঁয়াজ ২০০ থেকে ২২০ টাকা হয়েছে। ফলে ২ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকার বেশি। পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় কেনার আগ্রহ হারিয়েছে ক্রেতারা। সবমিলিয়ে আগের চেয়ে পেঁয়াজ বিক্রি অনেক কমে গেছে। আগে যে ক্রেতা ২ কেজি পেঁয়াজ নিতো সে ক্রেতাই এখন আধা কেজি, এক কেজি করে পেঁয়াজ নিচ্ছে।

অন্যদিকে আজ সকালেই কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি দরে পেঁয়াজ কিনে এনেছেন গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী এনামুল হক। তিনি বলেন, আজ সকালেই ডাবল দামে পেঁয়াজ কিনে আনলাম কারওয়ান বাজার থেকে। ৫৬ কেজি পেঁয়াজ কিনেছি ১১ হাজার ৩০ টাকা দিয়ে। তার মানে প্রতি কেজি পড়েছে ২০০ টাকার কাছাকাছি, এরপর আছে শ্রমিক খরচ, পরিবহনে আনার খরচ। সব মিলিয়ে খুচরা পেঁয়াজ বিক্রি করছি প্রতি কেজি ২২০ টাকায়। গত দুই দিন ধরে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমার বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এত দাম দিয়ে সাধারণ ক্রেতারা আর পেঁয়াজ কিনতে চাচ্ছে না। আগে পাইকারি কিনতে গেলে ৫/৬ মন পেঁয়াজ কিনে আনতাম কিন্তু আজ পেঁয়াজ এনেছি এক মনের কিছু বেশি। আসলে দাম বাড়ার পর মানুষ পেঁয়াজ কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তাই আমাদের ব্যবসা আগের চেয়ে অর্ধেকে নেমেছে।

রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা মোতাকাব্বের আহমেদ সকালে স্থানীয় বাজারে বাজার করতে এসে পেঁয়াজ কিনেছেন আধা কেজি। তিনি বলেন, বাজারে আসলে দুই এক কেজি করে পেঁয়াজ কিনি সবসময়, কিন্তু আজ অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির কারণে পেঁয়াজ কিনলাম আধা কেজি। এত দামে আমাদের মত সাধারণ ক্রেতারা পেঁয়াজ কিনতে আসলেই পারে না। দরকার হয় পেঁয়াজ কম কিনবো, কম খাবো তবুও এত দামে পেঁয়াজ কিনবো না। আমাদের কৃষি নির্ভর দেশেও যদি পেঁয়াজের দাম এতটা বেড়ে যায় রাতারাতি, তাহলে বলতে হবে বাজার মনিটরিং নেই, নেই কোন রকমের নিয়ন্ত্রণ।

জানা গেছে, বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টনের বেশি। গত অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ টনের মতো। তবে ক্ষেত থেকে তুলে সংরক্ষণ করা পর্যন্ত প্রায় ৪০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। ফলে প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ লাখ টন আমদানি করতে হয়, যার ৯০ শতাংশের বেশি আসে ভারত থেকে। এ জন্য ভারত পেঁয়াজের ওপর কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশে প্রভাব পড়ে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে সেসময় ৩০০ টাকার বেশি হয়েছিল পেঁয়াজের কেজি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...