ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের দুই মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ। মাঝে কয়েকদিনের অস্ত্রবিরতি বাদ দিলে প্রতিনিয়ত অকল্পনীয় বর্বরতায় গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইহুদিবাদী দেশটি। বর্তমানে গাজার দক্ষিণাঞ্চল, বিশেষ করে খান ইউনিস শহরে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। বিমান হামলার পাশাপাশি চালানো হচ্ছে স্থল অভিযান।
খান ইউনিসের প্রধান প্রধান সড়কে ফিরছে ইসরায়েলের ট্যাঙ্ক। অব্যাহত হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১৬ হাজার ২৪৮ জন। এর মধ্যে ৭ হাজারই শিশু।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলের হামলায় গতকাল বুধবার আরও ৭৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২৩ জন। মঙ্গলবার রাতে নুসেরাত শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা হয়েছে। এতে শিশুসহ ৯ জন নিহত হন।
গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েল প্রাথমিকভাবে উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের গাজা সিটিকে লক্ষ্যে পরিণত করে। সম্প্রতি সাত দিনের যুদ্ধবিরতি শেষ হলে তারা দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে হামলা বাড়ায়।
বিবিসি জানিয়েছে, বুধবার খান ইউনিসের জাবালিয়া ও সুজাইয়ার দিকে এগিয়েছে ইসরায়েলের ট্যাঙ্ক। এসব এলাকায় বিপুলসংখ্যক বেসামরিক মানুষের বাস। জাতিসংঘ বলছে, দক্ষিণ গাজার প্রায় ৬ লাখ মানুষকে সরে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু কার্যত তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।
এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তাঁর হাতে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী কূটনৈতিক হাতিয়ার ব্যবহার করেছেন। জাতিসংঘের সনদের ৯৯ অনুচ্ছেদ তাঁকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত যে কোনো বিষয়ের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আহ্বান করার ক্ষমতা দিয়েছে। এবার তিনি গাজায় তা ব্যবহার করছেন। এটি মহাসচিবের প্যানিক বোতাম চাপার সমতুল্য।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান বলেছেন, তাঁর দেশ গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং অন্য কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) আবেদন করেছে। এজন্য বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, প্রতি মিনিটে গাজায় পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। ইসরায়েলের ট্যাঙ্কের গোলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন।
আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে তিল ধারণের জায়গা নেই। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে অব্যাহত হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গাজায় আরেক দফা বাস্তুচ্যুতির ঢেউ শুরু হয়েছে। পুরো উপত্যকা এখন বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর জোন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, ফিলিস্তিনিরা অবর্ণনীয় দৈন্যদশা ও আতঙ্কের মধ্যে বাস করছেন। জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গাজায় ‘নৃশংস হত্যাকাণ্ড’ সংঘটিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এক দিনে তারা গাজার ২৫০টির বেশি লক্ষ্যে হামলা চালিয়েছে। খান ইউনিসের বাসিন্দা ৬০ বছরের খলিল আহমেদ আবু সুলেইমান বুধবার বলেন, শহরের পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। গত রাতে তারা ঘুমাতে পারেননি। কোথায় যাবেন, জানেন না। ৫৫ দিন ধরে তারা বাস্তুচ্যুত। হতাশার সুরে তিনি বলেন, এখন তিনি খান ইউনিসেই মরবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গাজার কোথাও নিরাপদ স্থান নেই।
কাতারের দোহা ইনস্টিটিউটের গণমাধ্যম বিভাগের অধ্যাপক এলমাসরি বলেন, গাজায় ইসরায়েলের উদ্দেশ্য বুঝতে ‘রহস্যময় বিশ্লেষণের’ দরকার পড়ে না।