অক্টোবর ১৮, ২০২৪

ফেসবুক ও গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে শর্তসাপেক্ষে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২৩ এর অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই আইনের ফলে ফেসবুক ও গুগল নাগরিকের অনুমতি ছাড়া কোনো তথ্য দেশের বাইরে নিতে পারবে না। আজ সোমবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ফেসবুক ও গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে শর্তসাপেক্ষে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২৩ এর অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই আইনের ফলে ফেসবুক ও গুগল নাগরিকের অনুমতি ছাড়া কোনো তথ্য দেশের বাইরে নিতে পারবে না।

যদি কোনো নাগরিক ফেসবুক ও গুগলকে তথ্য নেয়ার অনুমতি দেয়, তার প্রমাণ ফেসবুক ও গুগলকে সংরক্ষণ করতে করতে হবে বলেও জানান আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান।

তিনি আরও জানান, একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বের চার সদস্যের ডেটা প্রোটেকশন বোর্ড গঠন করা হবে। একেসঙ্গে তৈরি করা হবে একটি বিধিমালাও, যেখানে সরকার কোনো তথ্য চাইলে ফেসবুক ও গুগল তা দিতে বাধ্য থাকবে এমন বিষয় অন্তভুক্ত থাকবে  । এরপরে এই আইনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখানে যাচাই বাছাই শেষে পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতির কাছে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর আইনটি কার্যকর হবে। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে অন্তত এক বছর লাগতে পারে বলে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত বৈঠকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ আইনটি উপস্থাপন করেন।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সরকারি, বেসরকারি সব শিল্প কারখানার প্রক্রিয়া ও উদ্ভাবনী তথ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত দেশীয় প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির গোপনীয় তথ্যের সুরক্ষা প্রয়োজন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩’-এর খসড়া প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ খসড়া আইনের বিষয়ে গত বছরের ১৭ এপ্রিল আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে একাধিক সভা, কর্মশালা, ওয়েবসাইটে প্রদর্শনের মাধ্যমে সর্বসাধারণের মতামত নেয়া হয়।

‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩’-এর খসড়া পরিমার্জনপূর্বক চূড়ান্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাভাষা বাস্তবায়ন কোষ (বাবাকো)’ কর্তৃক প্রমিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে অংশীজনদের মতবিনিময়ের মাধ্যমে আইনটির খসড়া পুনরায় পরিমার্জন করা হয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ‘আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত প্রদান সংক্রান্ত কমিটি’ খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভা-বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করে।

এই আইনটির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে- উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত কার্যাবলি তত্ত্বাবধান ও পরিবীক্ষণের জন্য বিদ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থায় একটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা স্থাপন নিশ্চিত করা; কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত উপাত্ত সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, মজুত, ব্যবহার বা পুনঃব্যবহার, হস্তান্তর, প্রকাশ, বিনষ্টকরণ ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিধান করা; জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে উপাত্তের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা।

এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কোনো ব্যক্তির উপাত্ত সুরক্ষা ও উহার প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত কার্যাদি নিয়ন্ত্রণ ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান করা এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত উপাত্ত সুরক্ষার নীতিগুলো অনুসরণ করে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে মুক্ত বাণিজ্যের প্রসার ও বিস্তৃতি ঘটানোর ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উপাত্তের ব্যবহার নিশ্চিত করা।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর ব্যক্তিগত ‘উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২৩’এর কাজ শুরু হয়। যেখানে দেশী-বিদেশি অংশীজনের মতামত নেয়া হয়। দেশের নাগরিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মতো দেশের সঙ্গে পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের উপাত্ত সুরক্ষা আইন ২০২৩ আইনটি করা হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতসহ বিশ্বের ১৬২টি দেশে এই আইন রয়েছে। সূত্র সময় টিভি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...