নভেম্বর ২৩, ২০২৪

অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে নৌকায় ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন, তা গড়তে যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, বাবার মতো রক্ত দিতে হলেও পিছপা হবেন না তিনি।

শনিবার (১১ নভেম্বর) বিকেল মাতারবাড়ীতে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে নৌকায় ভোট চান প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ‘মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরসহ ১৪টি সমাপ্ত প্রকল্পের উদ্বোধন এবং চারটি নতুন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী জনসভাস্থলে পৌঁছালে মুহুর্মুহু স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। প্রধানমন্ত্রীও জনসভা মঞ্চে উঠে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনের জবাব দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাবা-মাসহ সব হারিয়েছি। হারাবার কিছু নেই, পাওয়ারও কিছু নেই। একটাই কাজ—বাংলাদেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে, উন্নত থাকে। যেভাবে আমার বাবা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই বাংলাদেশ আমি গড়তে চাই। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।’

‘বাংলাদেশের মানুষকে আমি পরিবার হিসেবে নিয়েছি। আপনাদের মাঝেই ফিরে পেয়েছি বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। আপানাদের কল্যাণের জন্য, আপনাদের উন্নয়নের জন্য আমি যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। প্রয়োজনে বাবার মতো বুকের রক্ত দিতেও আমি প্রস্তুত। শুধু আপনাদের কল্যাণ করাই আমার একমাত্র কাজ। আপনাদের কাছে দোয়া চাই।’

১৫ বছর আগের বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের তুলনা করে তিনি বলেন, ‘১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশ, অনেক পরিবর্তন আমরা করেছি। আজকে যার বয়স ১৫ বছর, সে মনে করবে, এটা তো এমনই ছিল। কিন্তু, তা না। এমনকি ২০-২৫ বছরের যে সন্তান, সে চিন্তা করে দেখুক, বাংলাদেশ এখন কোন জায়গায় আছে। কারণটা হলো আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই হয়েছে।’

জনসভায় উপস্থিত জনতার কাছে অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য নৌকায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামীতে নির্বাচন। সেই নির্বাচনে আমি আপনাদের কাছে চাইব, নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন, যাতে আপনাদের সেবা করতে পারি। যে কাজগুলো বাকি, তার জন্য আপনাদের কাছে নৌকায় ভোট চাই। আপনারা কি নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন? হাত তুলে দেখান।’

এ সময় উপস্থিত জনতা হাত তুলে নৌকার পক্ষে তাদের সমর্থনের কথা জানিয়ে স্লোগানে স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে তোলেন। কিছুক্ষণের জন্য বক্তব্য বন্ধ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাদের উল্লাস, ভালোবাসা আর সমর্থন প্রত্যক্ষ করেন। তিনি জনতাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, ‘আপনারা বিভিন্ন এলাকা থেকে কষ্ট করে এসেছেন, আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আপনাদের সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা হলো, আমি খুব আনন্দিত।’

স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজারে যা হয়েছে, তা বঙ্গবন্ধুর সময়ে। ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড় হয়, তাতে পুরো এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলোচ্ছ্বাসে কত মানুষ জীবন হারায়, কত জীবন নষ্ট হয়। তখন ক্ষমতায় খালেদা জিয়া, তিনি কিন্তু আসেননি। এসেছিলাম আমি আরা আমার নেতাকর্মীরা। আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই। সেই দিন কেউ আপনাদের পাশে দাঁড়ায়নি। এ কথা চিন্তা করে এই এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নকাজ হাতে নিয়েছি। এসেছি আপনাদের কিছু উপহার দিতে।’

কক্সবাজার-দোহাজারী রেলপথ উদ্বোধনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ’১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো কক্সবাজারে, তারা বস্তি করে থাকত। তাদের জন্য খুরুশকুলে বহুতল ভবন করে দিচ্ছি। কেউ ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না।’

দ্বীপ এলাকাগুলোতে সরকার সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই ভেবেছিল, দ্বীপ অঞ্চলগুলোতে কিছুই হবে না। এখন আলোকিত মহেশখালী, আলোকিত কুতুবদিয়া, আলোকিত মাতারবাড়ী।’

সমুদ্রসম্পদ অর্থনৈতিক উন্নয়নে যাতে কাজে লাগে, সরকার সেদিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দর করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারে ক্রীড়া কমপ্লেক্স হবে। এরইমধ্যে ক্রিকেট স্টেডিয়াম করেছি। ফুটবল স্টেডিয়ামও করব। প্রতিটি এলাকায় মিনি স্টেডিয়াম হবে, যাতে সবাই খেলাধুলা করতে পারে।’

তিনি বলেন, চাষিরা যাতে লবণ চাষ করতে পারেন…যাদের এখান থেকে সরানো হয়েছে, তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লবণ উৎপাদনের জন্য আধুনিক প্রক্রিয়া এবং যাতে ন্যায্যমূল্য পায়, সে ব্যবস্থা করছি। উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে পানি ব্যবহার করা হয়, সেই পানি যাতে চাষিরা পায়, পাইপলাইনের মাধ্যমে সে ব্যবস্থা আমরা করব।’

সম্প্রতি মক্কা-মদিনা সফরে দেশের মানুষের জন্য দোয়া করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের জন্য আমার বাবা সারাজীবন কষ্ট করেছেন। আমি তার কন্যা, আমার একটাই দায়িত্ব—বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ঘর পাবে, রোগে চিকিৎসা পাবে, লেখাপড়া শিখবে। বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ হবে, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলবে।

‘তার (বঙ্গবন্ধু) পদাঙ্ক অনুসরণ করে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছি। সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে হবে। আওয়ামী লীড় ছাড়া কেউ পারবে না। কারণ, তাদের কোনো দেশপ্রেম নেই। মানুষর প্রতিও তাদের কোনো দায়িত্ববোধ নেই।’

প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে মহেশখালী উপজেলাসহ পুরো জেলাজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে মাতারবাড়ীসহ পুরো মহেশখালী। নির্ধারিত সময়ের আগেই জনসভাস্থলে মানুষের ঢল নামে।

এর আগে পর্যটকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর পর তিনি রামুতে যান। সেখান থেকে মাতারবাড়ীতে আসেন।

১৯৯৪ সালে বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকাকালীন ঘূর্ণিঝড়কবলিত মানুষের দুর্দশা দেখতে কক্সবাজার সফরে এসেছিলেন শেখ হাসিনা। ওই সময় তিনি সমুদ্র উপকূলের দুর্যোগকবলিত মাতারবাড়ীও পরিদর্শন করেন।

মাতারবাড়ীকে ‘নিজের নানাবাড়ি’ উল্লেখ করে ‘দ্বিতীয় টুঙ্গিপাড়া’ আখ্যা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। দীর্ঘ ২৮ বছর পর আজ ‘দ্বিতীয় টুঙ্গিপাড়া’ খ্যাত কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে আসলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...