পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। হার দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ শুরু করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে জিতে সমতায় ফেরেন নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। আজকের ম্যাচটি দুই দলের জন্য ‘অলিখিত ফাইনাল’। আগে ব্যাটিং করে পাকিস্তানকে ৯ উইকেটে ১৬৬ রানে আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ।
মিরপুরের ধীর গতির উইকেটে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তই নেন পাকিস্তানের অধিনায়ক নিদা দার। সিদরা আমিনের ৮৪ রানের ইনিংসের সৌজন্যে ৯ উইকেটে ১৬৬ রান সংগ্রহ করেন তাঁরা।
গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও ব্যাটিংয়ের দুরবস্থার কথা উঠে আসে জ্যোতির বক্তব্যে। তাই সিরিজ জিততে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাটারদের দারুণ কিছু করা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ফারজানা ও মুরশিদা দুর্দান্ত ভাবেই ব্যাটিংটা রাঙিয়ে তুললেন। ১২৫ রানের জুটি গড়ে ইতিহাস গড়েছেন দুজনে।
নারী ক্রিকেটে ওপেনিং জুটিতে এটি এখন সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এর আগে ২০১১ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সাভারে ১১৩ রানের জুটি গড়েছিলেন শারমিন আক্তার ও সুখতারা রহমান। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটে ফারজানা ও মুরশিদার এটাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১২৭ রানের জুটি গড়েছিলেন রুমানা আহমেদ ও শারমিন।
ফারজানা ৫ চারে ৬২ রানে নাশরা সান্ধুর এলবিডব্লিউর শিকার হলে ভাঙে ১২৫ রানের ওপেনিং জুটি। নিজের পরের ওভারে মুরশিদাকেও ফেরান সান্ধু (৩৭ তম ওভার)। ৬ চারে ৫২ রান করেছেন মুরশিদা। এরপর কোনো বল খেলার আগেই রান আউট হয়ে ফেরেন ফাহিমা খাতুন।
দারুণ শুরুর পরও ৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবে চতুর্থ উইকেটে জ্যোতি ও সোবহানার ৩৯ রানের জুটিতে চাপ সামলিয়ে জয় নিশ্চিত হয় তাদের। জ্যোতি ১৮ ও সোবহানা ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন। পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে সান্ধু ২৭ রান দিয়ে ২টি উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে পাকিস্তানের প্রথম উইকেট নিতে ২০ তম ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ততক্ষণে স্কোর ৫০ পেরিয়ে যায় পাকিস্তান। দারুণ শুরু আর সিদরা আমিনের ফিফটিতে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশকে ১৬৭ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিল সফরকারীরা।
শুরুতে নেমে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে দলের সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন সিদরা। প্রশংসিত বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ যেন ম্যাচের শুরু থেকে অনেকটা সময় ছিল অচেনা। তবে পরে দুর্দান্ত কামব্যাক করেন নাহিদা আক্তার-ফাহিমা খাতুনেরা। বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে একাই লড়ে গেছেন পাকিস্তানের ওপেনার সিদরা। ৮৪ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। সাদাফ শামাসকে নিয়ে ওপেনিং জুটিতে ৬৫ রান যোগ করেন সিদরা। ২০ তম ওভারে সাদাফকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন স্পিনার নাহিদা। ৬১ বলে ৩১ রানে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন পাকিস্তানের এই ওপেনার।
দ্বিতীয় উইকেটে মুনিবা আলির সঙ্গে ২৮ রানের আরেকটি জুটি গড়েন সিদরা। ৩১ তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন স্বর্ণা আক্তার। ১৪ রানে মুনিবাকে ফেরান এই লেগ স্পিনার। এরপরই খেই হারায় পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডার। মুনিবার পরের পাঁচ ব্যাটারের কেউই আর দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি।
একপ্রান্ত আগলে ধরে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সপ্তম ফিফটি তুলে নিয়েছেন সিদরা। ১৪৩ বলে ৮৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ইনিংসে ছিল ৩টি চার। শেষ দিকে দিয়ানা বেগের ব্যাট থেকে আসে ১১ রান। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে নাহিদা ৩টি ও রাবেয়া খান নিয়েছেন ২ উইকেট।
বাংলাদেশ একাদশ- মুর্শিদা খাতুন, সোবহানা মোস্তারি, নিগার সুলতানা (অধিনায়ক ও উইকেটকিপার), স্বর্ণা আক্তার, ফাহিমা খাতুন, রিতু মনি, নাহিদা আক্তার, রাবেয়া খান, মারুফা আক্তার ও নিশিতা আক্তার নিশি।
পাকিস্তান একাদশ- সিদরা আমিন, সাদাফ শামস, মুনিবা আলী, বিসমাহ মারুফ, নিদা দার (অধিনায়ক), উম্মে হানি, আলিয়া রিয়াজ, নাজিহা আলভি, দিয়ানা বেগ, নিশরা সান্ধু ও সাদিয়া ইকবাল