ঋণ বিতরণের চেয়ে আমানত কমে যাওয়ায় কয়েকটি ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়েছে। সংকটে থাকা এসব ব্যাংকগুলোকে সোমবার (৩০ অক্টোবর) ১৬ হাজার ৪১০ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগের দিন ধার দিয়েছিলো ১৪ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সোমবার সাতদিন মেয়াদি রেপোর বিপরীতে ১৬টি ব্যাংক ও দুইটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়েছে ৬ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। ‘স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি’ হিসেবে একটি ব্যাংক ১ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা নিয়েছে।
এছাড়া একদিন মেয়াদি তারল্য সুবিধার আওতায় ১৩টি বেসরকারি ব্যাংক ৮ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা নিয়েছে।
সাতদিন মেয়াদি রেপোর বার্ষিক সুদহার ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আর স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির সুদহার ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং তারল্য সুবিধার সুদের হার ছিলো ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশের মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশ। বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও এটি কমানো সম্ভব হয়নি। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলো। এর সিংহভাগ বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছিল। এর উপর সুদের হার এক জায়গায় ধরে রাখা হয়েছিল। এছাড়া রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বাজার থেকে টাকা উঠে আসছে। এর ফলে ব্যাংক খাত তারল্য সংকটে ভুগছে।
করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্ব অর্থনীতির নানা সংকট দেখিয়ে ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর সুযোগ নিয়ে ব্যাংকগুলোর অনেক বড় বড় গ্রাহক বছরের পর বছর ঋণ বাড়াচ্ছে কিন্তু টাকা ফেরত দিচ্ছে না। আবার অনেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার করে দিচ্ছে। এতে করে ব্যাংক থেকে যেভাবে টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে সেই হারে ফেরত আসছে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারকে ঋণ না দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি ঋণ দেওয়া মানে নতুন টাকা ছাপানোর মতো। এ প্রবণতা মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দেয়। দীর্ঘদিন এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি। তবে পরবর্তীতে আইএমএফের ঋণের শর্তের কারণে গত জুলাই থেকে সুদহারের সীমা তুলে নতুন ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর ৪ অক্টোবর রেপোর সুদহার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।