গভর্নর হিসেবে ‘ডি গ্রেড’ পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক গ্লোবাল ফিন্যান্স ম্যাগাজিনের র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের মূল্যায়ন করা হয়েছে।
গত রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) ম্যাগাজিনটির ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
একই র্যাঙ্কিংয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর শক্তিকান্ত দাস পেয়েছেন ‘এ প্লাস’। শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল ভীরাসিংহে পেয়েছেন ‘এ মাইনাস’ ও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জামিল আহমেদ পেয়েছেন ‘সি মাইনাস’।
গভর্নর হিসেবে এ প্লাস পেয়েছেন মাত্র তিনজন গভর্নর। বাকি দুজন হচ্ছেন- সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর টমাস জর্ডান ও ভিয়েতনামের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নগুয়েন থি হোং।
১৯৯৪ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গভর্নরদের গ্রেডিং করে আসছে গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন। সাময়িকীটির বার্ষিক প্রকাশনা হিসেবে নিয়মিতভাবে প্রকাশ হচ্ছে ‘সেন্ট্রাল ব্যাংকার রিপোর্ট কার্ড’। ১০১টি গুরুত্বপূর্ণ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের মূল্যায়ন করা হয়েছে ‘এ, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’, ‘এফ’ এই পাঁচটি শ্রেণিতে। পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে এই এ, বি, সি ও ডি শ্রেণিকে আবার তিনটি উপশ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যেমন- ‘এ’ শ্রেণির গভর্নরদের ‘এ’ প্লাস, ‘এ’ এবং ‘এ’ মাইনাস উপশ্রেণিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অকার্যকর ও চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্যর্থ বিবেচনা করলে সেটির গভর্নরকে ‘এফ’ গ্রেডে রেখে তালিকাটি করা হয়েছে।
রিপোর্ট কার্ডে এশিয়ায় গভর্নরদের মধ্যে ভারতের পাশাপাশি ‘এ প্লাস’ গ্রেড পেয়েছেন ভিয়েতনামের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নগুয়েন থি হং। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর মহাপ্রসাদ অধিকারী ‘বি মাইনাস’, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জামিল আহমদ পেয়েছেন ‘সি মাইনাস’।
ম্যাগাজিনটির বিশ্লেষণে গভর্নরদের মূল্যায়নের মাপকাঠি হিসেবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হারের সুরক্ষা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুসংহত করার মতো বিষয়গুলো উঠে এসেছে। যেসব সূচকে গত এক বছরে বাংলাদেশের অবনতি হয়েছে বলে বলছে গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় দুর্বলতা হিসেবে অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্পর্কে গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের মূল্যায়নে বলা হয়, করোনা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ অতিরিক্ত ছিল। স্থিতিশীল ছিল টাকার বিনিময় হারও। কিন্তু ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে টাকার অবমূল্যায়ন হয় সাড়ে ৯ শতাংশ। ডলার সংকটে হিমশিম খেতে থাকেন পণ্য আমদানিকারকরা। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি ও খাদ্যমূল্য ব্যাপক মাত্রায় বাড়তে থাকে। মূল্যস্ফীতিও হয়ে ওঠে লাগামহীন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা কমতে থাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। অর্থনীতির কাঠামোগত দুর্বলতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের ৬০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণের কারণে মূল্যস্ফীতির মতো বাহ্যিক ধাক্কার মুখে নাজুক অবস্থায় পড়ে যায় বাংলাদেশ।
গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের বিগত বছরগুলোয় প্রকাশিত ‘সেন্ট্রাল ব্যাংকার রিপোর্ট কার্ড’ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে তার গ্রেড ছিল ‘সি’। ২০১৫ সালে তিনি ‘বি মাইনাস’ গ্রেডে উন্নীত হন। তারপরের গভর্নর ফজলে কবির ২০১৭ সালে ‘বি’ গ্রেড অর্জন করেন। তবে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে তার গ্রেড ছিল নিম্নমুখী। ওই দু’বছর তিনি পান ‘ডি’ গ্রেড। ২০২০ ও ২০২১ সালের জন্য ফজলে কবিরকে ‘সি’ গ্রেড দেয় ম্যাগাজিনটি।