নভেম্বর ২৬, ২০২৪

চলচ্চিত্রে গান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গানের দৃশ্যধারণ করা হয় নৃত্যপরিচালকের নির্দেশনায়। নৃত্যপরিচালক গানটিকে দৃষ্টিনন্দন ও অর্থবহ করতে শিল্পীদের নাচের মুদ্রা দেখিয়ে দেন। কিন্তু সম্প্রতি কাজটি করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন নৃত্যপরিচালক নিজেই। শুটিং সেটে নায়িকার হাত ধরায় চটেছেন সেই নায়িকা। এখানেই ঘটনার শেষ হয়নি। তিনি আপত্তি জানিয়ে নির্মাতা ও প্রযোজককে দেন কড়া বার্তা। এমনকি এরপর শুটিং না করেই দেশ ছাড়েন তিনি। এ ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে- হাত ধরাতেই এতো কিছু নাকি ভেতরে আরো ‘কিন্তু’ আছে। কারণ অনেকের যুক্তিতে শুধু হাত ধরাতেই এমন ঘটনা ঘটার কথা নয়। প্রশ্ন উঠেছে পেশাদারিত্ব নিয়েও।

ঘটনাটি ঘটেছে ‘ছায়াবাজ’ সিনেমার শুটিং সেটে। তাজু কামরুলের পরিচালনায় এই সিনেমায় চিত্রনায়ক জায়েদ খান ও কলকাতার সায়ন্তিকা ব্যাণার্জি জুটি বাঁধেন। সিনেমাটির নৃত্যপরিচালনা করছেন মাইকেল বাবু। সায়ন্তিকা দেশে ফিরে গিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে জানিয়েছেন সেদিন শুটিং সেটে কি হয়েছিল। ভারতীয় এক গণমাধ্যমে নায়িকা বলেন, প্রথমে অন্য এক নৃত্য পরিচালক এসেছিলেন নাচের দৃশ্যে শুটিংয়ের জন্য। কিন্তু সেখানে টাকা-পয়সা নিয়ে সমস্যার কারণে তিনি চলে যান। তারপর মাইকেল নামে এক বাচ্চা ছেলে আসে।

সায়ন্তিকা বলেন, আমি একজন পেশাদার অভিনয়শিল্পী। তাই এ ধরনের কাজ করার কথা ভাবতেই পারি না। সেদিন শুটিং সেটে অনুমতি না নিয়েই মাইকেল আমার হাত ধরে আমাকে সরাতে গিয়েছিল। আমি তখন সবার সামনেই তাকে বাধা দেই। এ ছাড়া মূল সমস্যার পেছনে আরেকটি কারণ হচ্ছে সিনেমার প্রযোজক। বেশ কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা নিয়ে বারবার আমি প্রযোজক মনিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তার তরফ থেকে কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।

দুদিন ধরে কক্সবাজারে গিয়ে অপেক্ষা করেছি। শুটিং নিয়ে প্রযোজকের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। হঠাৎই বলা হলো, নাচের দৃশ্যের শুটিং করা হবে! তাই তখন বলেছিলাম, আমি এভাবে কাজ করব না মাইকেলের সঙ্গে। সায়ন্তিকার দাবি, এতো কিছুর পরও প্রযোজক জানিয়েছিলেন মাইকেলকে সঙ্গে নিয়েই তার কাজ করতে হবে।

এ দিকে প্রযোজক মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় মাইকেলের কোনো দোষ নেই। কাজের স্বার্থেই সায়ন্তিকার হাত ধরেছিলেন তিনি। তাই সায়ন্তিকাকে বলেছিলাম- কাজ করতে হলে মাইকেলের সঙ্গেই করতে হবে। না হলে কাজ করার প্রয়োজন নেই। পর দিন সকালে সেট ছেড়ে চলে যান সায়ন্তিকা।

সায়ন্তিকার দাবি, তারা যদি সঠিক পদ্ধতিতে শুটিং করেন, তাহলে আমি নিশ্চয়ই সিনেমার কাজ শেষ করব। কিন্তু তার আগে আমাকে চিত্রনাট্য, শট ডিভিশন সব কিছু সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে হবে। তবেই আমি শুটিং করব।

এখন প্রশ্ন হলো : গল্প না শুনেই, চিত্রনাট্য না পড়েই কি সায়ন্তিকা সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন?

এদিকে মাইকেলের ভাষ্য, ‘সায়ন্তিকার হাত ধরে নাচের স্টেপ দেখাচ্ছিলাম। তখন তিনি বলেন, হাত ধরো না, মুখে বুঝিয়ে দাও। কথা না বাড়িয়ে সেভাবেই তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি আমি। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কোনো তর্ক-বিতর্কও হয়নি আমার।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশের সিনিয়র একজন নৃত্যশিল্পী ও চিত্রনায়িকা বলেন, সিনেমার গানের শুটিং করতে গিয়ে আমাদের নৃত্যপরিচালকগণ অনেক সময় হাত ধরে শিখিয়েছেন। তাতে দোষের কি? তাছাড়া অভিনয়ের প্রয়োজনে আমাদের শিল্পীদের ধর্ষণদৃশ্যও তো করতে হয়। এটাকে কেন অন্যভাবে নিচ্ছে বুঝতে পারলাম না। এটা প্রফেশনালিজম নয়।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...