নিজেকে বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে বিশ্বের বিকাশমান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনকে ব্যবহার করেছে ভারত
নিজেকে বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে বিশ্বের বিকাশমান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনকে ব্যবহার করেছে ভারত। বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্মেলনে সফল যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার কিছুটা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে নয়াদিল্লি।
তবে ভারতের এই উত্থান তার নিকটতম প্রতিবেশীদের মাঝে কিছুটা সতর্কতা সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধে লিপ্ত রয়েছে ভারত-পাকিস্তান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক সম্পাদক অ্যানবারাসান ইথিরাজন লিখেছেন, আমি যখনই কাঠমান্ডু কিংবা ঢাকার মতো দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য রাজধানীতে যাই, তখনই আমি মানুষের একাংশের মাঝে ভারত-বিরোধী মনোভাব গড়ে উঠছে বলে দেখতে পাই।
সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিক্ততা সৃষ্টি করে নয়াদিল্লি এমন দ্বিপাক্ষিক সব সমস্যার সমাধান করবে বলে প্রত্যাশা করে নেপাল। আর পানি-বণ্টন চুক্তি নিয়ে বিরোধ ঢাকায় অনেক ক্ষতি করছে।
ভুটানের কেউ কেউ মনে করেন, উত্তরাঞ্চলীয় দৈত্যাকার প্রতিবেশী চীনের সাথে থিম্পুর সীমান্ত সমস্যা সমাধানে পৌঁছানোর পথে দাঁড়িয়েছে ভারত।
অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কানরা বরং অসহায়ভাবে তাদের দেশে চলমান চীন-ভারত প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখছেন। জি-২০ জোটের শীর্ষ সম্মেলনের সফল সমাপ্তি নিঃসন্দেহে দিল্লির বৈশ্বিক ভাবমূর্তি বাড়িয়ে তুলেছে। কিন্তু ভারত কি প্রতিবেশীদের সঙ্গে না নিয়ে বিশ্বশক্তি হতে পারবে?
• জি-২০ সম্মেলনে বাজিমাত মোদির?
সম্প্রতি প্রকাশিত জরিপের এক ফলাফলে দেখা যায়, ভারতের বেশিরভাগ মানুষই বিশ্বাস করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমলে বিশ্বে ভারতের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
জি-২০ সম্মেলনের আগ মুহূর্তে মার্কিন জরিপ সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপে দেখা গেছে, মোদি এবং ভারতের বৈশ্বিক প্রভাব দেশটিতে অনুকূল হিসেবে দেখা হয়।
নয়াদিল্লির সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিজ (সিএসডিএস) ও দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৪ শতাংশ জানান, মোদির নেতৃত্বে ভারত বর্তমানে বিশ্বনেতা। তবে জরিপে অংশ নেওয়া ২৭ শতাংশ মানুষ এই বিষয়ে একমত নন বলে জানিয়েছেন।
অনেকের বিশ্বাস, জি-২০’র শীর্ষ সম্মেলনটি অনানুষ্ঠানিকভাবে ভারতের আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনের জন্য এক অতিসূক্ষ্ম প্রচারণার কৌশল হয়ে উঠবে। রাজধানী নয়াদিল্লিসহ দেশের অন্যান্য অনেক জায়গায় জি-২০’র বিশাল বিশাল পোস্টারে নরেন্দ্র মোদির ছবি শোভা পাচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল— জি-২০ সম্মেলন মোদির অবস্থানের প্রতি ভোটারদের আস্থা কি বাড়িয়ে তুলবে? নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দুটি সাধারণ নির্বাচনে জয় পেয়েছে এবং ভারতের শক্তিশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
অন্যদিকে ভারতের ২৮টি রাজ্যের মাত্র অর্ধেকের নিয়ন্ত্রণ করে বিজেপি। দেশটিতে সাধারণ মানুষ ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব আর মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে যে অসন্তুষ্ট তা এসব জরিপে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
তারপরও জরিপকারীরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদি টানা তৃতীয়বারের মতো রেকর্ড জয় পেতে যাচ্ছেন। আর তার এই সাফল্য ছোট্ট অথচ জনপ্রিয় ধারণার কারণ হতে পারে যে, তিনি ভারতের বৈশ্বিক মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন।