নভেম্বর ২৩, ২০২৪

আগামী ৮-১০ সেপ্টেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে নয়াদিল্লীর উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আগে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। কৃষি গবেষণা খাতে সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও দুদেশের সাধারণ নাগরিকদের লেনদেন সহজ করতে এ সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষর হবে।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিনিধি দলে থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা, অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ যিনি জি-২০ এ বাংলাদেশ শেরপা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব), প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

মোমেন বলেন, জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ মোট নয়টি দেশকে ‘অতিথি রাষ্ট্র’ হিসেবে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানায় ভারত। দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন এবং আরব আমিরাত। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বিদ্যমান অনন্য সম্পর্কের ভিত্তিতে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এ সুযোগ লাভ করে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি গর্বের বিষয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে আয়োজিত ১৮তম জি-২০ সম্মেলনের সব সভায় অংশগ্রহণ করছে বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এবং সুপারিশুলো তুলে ধরছে, যা স্বাগতিক দেশ ভারতসহ অংশগ্রহণকারী দেশগুলোতে প্রশংসিত হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আগামী ৮ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লী পৌঁছাবেন। আর ওইদিন বিকালে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন, যেখানে দুদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বৈঠকের আগে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। কৃষি গবেষণা খাতে সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও দুদেশের সাধারণ নাগরিকদের লেনদেন সহজীকরণের জন্য এ সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষর করা হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৯ সেপ্টেম্বর জি-২০ নেতৃবৃন্দের শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন হবে। প্রধানমন্ত্রী জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন। সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’-এর আওতায় প্রধানমন্ত্রী দুটি অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন। দুটি অধিবেশনে তিনি বর্তমান বিশ্ব সম্প্রদায়, বিশেষ করে, গ্লোবাল সাউথ জলবায়ু পরিবর্তন, করোনা মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, ইউরোপে যুদ্ধের ফলে জ্বালানি-খাদ্য পণ্য-সারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার মত যে সব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, তা মোকাবিলার বিষয়ে মূল্যবান বক্তব্য তুলে ধরবেন।

পাশাপাশি, আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশের অর্জিত অভাবনীয় সাফল্যের অভিজ্ঞতা সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থাপন করবেন বলেও জানান তিনি।

এ ছাড়া, ৯ সেপ্টেম্বর ওই দুটি অধিবেশনের মাঝে সম্মেলনের সাইড লাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য দেশের একাধিক নেতার সাথে বৈঠকে মিলিত হবেন। প্রাথমিকভাবে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।

জি-২০ সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিন ১০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য দেশের নেতৃবৃন্দের সাথে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন। এরপর, তিনি সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন। সম্মেলনের শেষ দিনে G20 New Delhi Leaders Declaration গৃহীত হবে। ১০ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় উদ্দেশে নয়া দিল্লি ছেড়ে আসবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পর্যায়ে সুগভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, বিভিন্ন সময়ে পারস্পরিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমমনা অবস্থান দুই দেশের সম্পর্ককে গভীরতর করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দুই দেশের সম্পর্ক অভাবনীয় গতি পেয়েছে- যা ‘সোনালি অধ্যায়’ হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। একইভাবে বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতও বাংলাদেশকে অন্যতম বন্ধুপ্রতীম এবং সহযোগী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে। যা জি-২০-তে বাংলাদেশের ‘অতিথি রাষ্ট্র’ হিসেবে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে পুনর্ব্যক্ত হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বিগত ১৪ বছরে সরকারের অভাবনীয় সাফল্যের স্বীকৃতি। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি অনন্য সাধারণ অভিজ্ঞতা হবে এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর সংগঠন জি-২০এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। এটি জি-২০ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রধান ফোরাম। জি-২০’র সদস্যরা বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ এবং বিশ্ব বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ এবং বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ইস্যুতে বৈশ্বিক কাঠামো গঠন ও শক্তিশালীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...