তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি অভিযোগ করছে যে- তাদের আন্দোলন ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গ আনা হয়েছে। আমি ইউনূসের প্রতি সম্মান রেখে জানাতে চাই- নোবেল পেলে কেউ কি আইনের ঊর্ধ্বে চলে যায়? তার শ্রমিকদের ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তিনি কি তা দিয়েছেন? বিএনপি আসলে আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে ইউনূসের আশ্রয় নিয়েছে।
আজ বুধবার প্রেসক্লাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ড. জেবউননেছা রচিত ‘বেদনাতুর ১৯৭৫ আগস্টের শহীদদের আলেখ্য’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বইটি লিখেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক এবং বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ড. জেবউননেছা।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নাকি বলেছেন, তাদের (বিএনপি) আন্দোলন ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গ আনা হয়েছে। আমি ড. ইউনূসের প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, নোবেল পুরস্কার পেলেই কি কেউ আইনের ঊর্ধ্বে? দেশের রাষ্ট্রপতি হলে কি কেউ আইনের ঊর্ধ্বে? হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তাকেও কয়েক বছর জেলখানায় কাটাতে হয়েছে৷ এ দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন খালেদা জিয়া। তিনিও শাস্তি ভোগ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকেও কিছুদিনের জন্য জেলখানায় যেতে হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। এমনকি তাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন আইয়ুব খান। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাকে বলা হয়েছিল, ৬ দফার দুইটি দফা বাদ দিতে। তার বিপরীতে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ৭০ এর নির্বাচনের আগে ৬ দফা ছিল আওয়ামী লীগের। এখন তা জনগণের দফা। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রব্যবস্থায় বাঙালিদের মুক্তি নেই। তাই তিনি ৬ দফা প্রণয়ন করেছিলেন। তিনি যখন মনে করলেন ডাক দেওয়া দরকার, তখনই স্বাধীনতার ডাক দিলেন তিনি।
হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে প্রধান দুই কুশীলব- খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমান। তার প্রমাণ হচ্ছে- ক্ষমতা দখল করার পর তাকে সেনাপতি বানানো। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য, যারা খুনের ওপর দাড়িয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন, তারা এখন রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং ভোটও পান। রাত-বিরাতে বিদেশিদের কাছে ধরনা দেন। অথচ তারা কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
ব্যাতিক্রমধর্মী ও গবেষণালব্ধ গ্রন্থ রচনা করার জন্য অধ্যাপক জেবউননেছাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের ওপর অনেক বই রচিত হয়েছে। কিন্তু অনেক বইয়ের মান সঠিক থাকে না। সেখানে জেবউনেছার বইটি ব্যতিক্রম। কারণ ১৫ আগস্টে নিহতদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে জেনে দীর্ঘদিন ধরে খোঁজ-খবর নিয়ে বইয়ের মধ্যে নিয়ে আসার কাজটি সম্ভবত আগে কেউ ভালোভাবে করেনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এমন একটি পরিশ্রমলব্ধ গ্রন্থ লেখার জন্য জেবউননেছাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি জাতির পক্ষ থেকে এটি করেছেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট আমরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমরা সেদিন বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। ছোট্ট রাসেলকেও সেদিন ঘাতকরা বাঁচতে দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মজিজ্ঞাসা, আত্মপ্রশ্ন আমাদের অর্জন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হয়েছে, কিন্তু এর পেছনের কুশীলবদের বিচার করা হয়নি। কারা এর পেছনে ছিল, সেটা সবাইকে জানাতে হবে। এজন্য আমাদের আত্ম জিজ্ঞাসা, আত্মপ্রশ্ন করতে হবে।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সভাপতি ও ইমেরিটাস অধ্যাপক শিল্পী হাশেম খান বলেন, ৭৫ এর নৃশংস হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছিল, তারা এর ইতিহাস অনেকভাবে চাপা দিয়ে রাখতে চেষ্টা করেছিল, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম সেই ইতিহাস জানতে না পারে। যদি আমরা এই ইতিহাস ভুলে যাই, তাহলে আমাদের নিজেদের অস্তিত্বই হারিয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের মেজো কন্যা হুরুন্নেছা, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, অধ্যাপক মাহফুজা খানম, শহীদ আব্দুল নঈম খানের বড় বোন সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা, শহীদ কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদের কন্যা আফরোজা জামিল, শহীদ সুলতানা কামালের ছোট ভাই গোলাম আহমেদ মৃধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের নাট্যবন্ধু বীর মুক্তিযোদ্ধা ম হামিদ।