এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া বিদেশে অর্থ বিনিয়োগ, স্থানান্তরের অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধানে হাইকোর্টের আদেশের ওপর স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটাসকো) দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। আগামী সংসদ নির্বাচনের পর এই তারিখ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বুধবার হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের আবেদন শুনানির পর এ আদেশ দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালত।
একইসঙ্গে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৮ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়। সেই পর্যন্ত এই স্থিতাবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছেন এস আলম গ্রুপের আইনজীবীরা। এর ফলে এই অনুসন্ধানও সেই পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলেও জানান তারা।
তবে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে মোহাম্মদ সাইফুল আলমের করা আবেদন অনুযায়ী গণমাধ্যমে এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে বিচারক কোনো মন্তব্য করেননি।
আদালতে এস আলমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, আহসানুল করিম ও মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা। দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
সম্প্রতি বিদেশে এস আলম গ্রুপের বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ তদন্তে হাইকোর্টের স্বপ্রণোদিত রুলে পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তবে, পক্ষভুক্ত না করে ব্যারিস্টার সুমনের আবেদনটি নথিভুক্ত করে রাখেন হাইকোর্ট।
আবেদনটি নথিভুক্তির সময় এক পর্যায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘যারা অর্থ পাচারে (মানি লন্ডারিং) যুক্ত থাকে, তাদের মানসিক রোগ আছে। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মতো বিষয়ে চুপ করে থাকাটা অন্যায়। জেনেশুনে আমরা চোখ বন্ধ করে থাকতে পারি না। দেশ ও জাতির স্বার্থে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে। তবে, অন্যায়ভাবে কাউকে হেয় করার জন্য কিছু করা হলে তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে না। ইদানিং দেখা যাচ্ছে, কোনো রায় কারও বিপক্ষে গেলেই কোর্টকে অ্যাটাক করে মন্তব্য করা হয়। বলা হয় ফরমায়েশি রায়। এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর।’
গত ৪ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্টের সূত্র ধরে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বিদেশে এস আলম গ্রুপের ১০০ কোটি ডলারের অবৈধ বিনিয়োগের বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিবেকের তাড়নায় তিনি বিষয়টি আদালতের নজরে এনেছেন। কারণ এক সময় বৃটিশরা এখানে শাসন করতো এখান থেকে টাকা লুটে নিয়ে যেত। এখন আমাদের কিছু অসাধু ব্যক্তি নিজেরা বিদেশে টাকা দিয়ে আসেন। তিনি এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলমের নাম উল্লেখ করে বলেন, যাদের এ দেশটাকে সিঙ্গাপুর বানানোর কথা ছিল, তারা এদেশের টাকা সেখানে রেখে এসে সিঙ্গাপুরকে আরও ধনী বানাচ্ছেন। সাইফুল আলম, তার স্ত্রী ও ছেলে সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব নিয়েছেন ইনভেস্টমেন্ট কোটায়, কিন্তু ইনভেস্টমেন্ট কোটায় এভাবে টাকা নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই, এটা অবৈধ।
অন্য আবেদনে অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান প্রশ্নে হাইকোর্টের দেওয়া স্বতঃপ্রণোদিত রুলে বিবাদী হিসেবে পক্ষভুক্ত হতে আর্জি জানানো হয়েছে। এস আলম ও তার স্ত্রীর পক্ষ থেকে অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান প্রশ্নে হাইকোর্টের দেওয়া রুলের প্রত্যাহার চেয়েও আবেদন করা হয়েছে।
পরে, এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অর্থ পাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
দেশের একটি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যদিও বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো অনুমতি তিনি নেননি। এ ছাড়া বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বাইরে বিনিয়োগের জন্য এ পর্যন্ত ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিলেও চট্টগ্রামভিত্তিক বিশাল এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম সেই তালিকায় নেই।