ইউক্রেন যুদ্ধের রেশ এতকাল সরাসরি তেমন টের না পেলেও রাশিয়ার রাজধানী মস্কো এবার নিয়মিত হামলার শিকার হচ্ছে৷ রুশ সেনাবাহিনীর সূত্র অনুযায়ী- মঙ্গলবার ভোরে একাধিক ড্রোন দিয়ে শহরে ‘সন্ত্রাসী’ হামলা চালানো হয়েছে৷ সেনাবাহিনী সেই হামলা বানচালের দাবি জানালেও একটি ড্রোন একটি বহুতল ভবনে আঘাত হেনেছে৷ সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় নাকি ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি৷ হামলার সময় মস্কোর একটি বিমানবন্দর কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়৷
উল্লেখ্য, গত রোববার ‘মস্কভা সিটি’ নামের সেই ভবনটি ড্রোন হামলার শিকার হয়েছিল৷ মঙ্গলবারের হামলায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি৷
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সোমবার বলেন, মস্কোসহ রাশিয়ার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর উপর মরিয়া হামলা আসলে ইউক্রেনের হতাশা ফুটিয়ে তুলছে৷ তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, যে রাশিয়া এমন হামলা প্রতিহত করতে যাবতীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ ইউক্রেন সাধারণত রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলার বিষয়ে মুখ না খোলায় সে দেশের সরকারের প্রতিক্রিয়া জানা যায় নি৷ তবে প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি চলতি সপ্তাহে বলেছেন, যে যুদ্ধ রাশিয়া তথা সে দেশের প্রতীকী কেন্দ্র ও সামরিক ঘাঁটিগুলিতে ফিরে আসছে৷
যুদ্ধ শুরুর প্রায় ১৭ মাস পরেও ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা অব্যাহত রয়েছে৷ সোমবার জেলেনস্কির জন্মস্থান ক্রিভইয়ি রিগের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ছয় জন নিহত ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে৷
ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানসূত্রের লক্ষ্যে সৌদি আরব যে সম্মেলন আয়োজন করছে, তাতে খোদ রাশিয়ার অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে৷ সোমবার ক্রেমলিন জানিয়েছে, সেই সম্মেলনের লক্ষ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানার প্রয়োজন রয়েছে৷ ইউক্রেন জানিয়েছে, সেই সম্মেলনে রাশিয়াকে মোটেই স্বাগত জানানো হবে না৷
জেলেনস্কির চিফ অফ স্টাফ আন্দ্রি ইয়েরমাক বলেন, পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণের দেশগুলি বিশ্ব নিরাপত্তা নতুন করে সাজানোর লক্ষ্যে কাজ করলে ইউক্রেনের ‘সীমাহীন আনন্দ’ হবে৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদ মানা দেশগুলির তালিকায় রাশিয়া থাকতে পারে না৷
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সূত্র অনুযায়ী- সৌদি আরব সম্মেলনে কিছু পশ্চিমা দেশ, ইউক্রেন এবং প্রথম সারির কিছু উন্নয়নশীল দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে৷ সেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির শান্তির পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবার কথা৷ ক্রেমলিনের মুখপাত্র পেসকভ সেই রিপোর্ট সম্পর্কে বলেন, রাশিয়া অবশ্যই সম্মেলনের উপর নজর রাখবে৷ তাঁর মতে, যে কোনো শান্তিপূর্ণ সমাধানসূত্রের ইতিবাচক মূল্যায়ন হওয়া উচিত৷ তবে পেসকভ বলেন, আপাতত ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনার কোনো সুযোগ নেই৷
সম্মেলনে রাশিয়ার অনুপস্থিতি নিয়ে সংশয় বাড়ছে৷ মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস মানুয়েল লোপেস বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকলে তবেই তিনি সম্মেলনে অংশ নিতে আগ্রহী৷ তাঁর মতে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্পূর্ণ ‘অযৌক্তিক’ এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া উচিত নয়৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স, এএফপি